শেখর দেব-এর প্রবন্ধ : কবিতার চিন্তা ও চেতনা
কবির চিন্তা ও চেতনার গভীরতা কবিতার রসদ। মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। চিন্তার স্বাভাবিক প্রবণতা কবিকে কাব্য শরীর দাঁড় করাতে সাহায্য করে। চেতনা চিন্তাকে পরিশীলিত করে। সম্যক জ্ঞান কবিতায় আনে সুনির্দিষ্ট বার্তা। এ বার্তা প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তা নয়। যেহেতু কবিতার ভাষা মনের ভাষা, এর বার্তাও একান্ত মনোগত। এ বার্তা মানুষের মনের উৎকৃষ্ট অনুভূতির বার্তা। উদ্দেশ্যহীন মনোভাষা আবেগতাড়িত কবিতার জন্ম দেয়। মনের চিন্তাগুলো ভাষা হবার আগে চেতনায় পরিশুদ্ধ হলে কবিতা হয়। অন্যথায় মনের ভাষা ও মুখের ভাষা এক হয়ে যায়। অবশ্য মুখের ভাষা মস্তিষ্ক ও মনের চিন্তা প্রসূত। তাহলে মনের ভাষা ও মুখের ভাষায় পার্থক্য কই? পার্থক্য আছে। আছে বলেই মাঝে মাঝে মনের কথা ঠিক প্রকাশ করে উঠতে পারি না। আমরা নির্বাক হই, ভাষাহীন হই। তাই কবিতা মনের ভাষা। এখানেই কবিতা ও কথাসাহিত্যে পার্থক্য। কবিতা যদি মুখের ভাষা হয়ে যায় তা শিল্পমূল্য হারায়। কবির আবেগ কবিকে সমৃদ্ধ করে যেমন ডুবায়ও তেমন। আবেগের পরিশীলন না হলে কবিতা উর্ত্তীন্ন হয় না। আবেগ বর্ষার জমাট বাঁধা কালো মেঘের মতো। তার একটাই ফল তুমুল ঝরে যাওয়া, চরাচর ভাসানো। কিন্তু বৈশাখের মেঘ অনেক রহস্যজনক। এখন কালো হয়ে এলো আবার এখন ফর্সা হয়ে আসছে। এখন ঢেকে দিল নীল আকাশ, আবার সমহিমায় হাজির। এর মধ্যে একটা ধাঁধা আছে। এটাই কবিতা। তাই কাঁচা আবেগ কবিতাকে বর্ষার মেঘের মতো ভারী করে তোলে, যার ফল সুনিশ্চিত। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী। চিন্তায় আবেগ থাকে, তাই চেতনার দরকার হয়। কবির এমন কোন দায় নেই কবিতায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় বোঝাতে হবে। বোঝাতে গেলেই কবি কাব্য মঞ্চে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কবির চিন্তা ও চেতনার সমন্বয়ে কবিতা হয়। বোঝার দায়িত্ব পাঠকের। না বুঝলেও তেমন ক্ষতি নেই কারণ আগেই বলেছি কবিতার ভাষা মনের ভাষা। তাই মনের ভাষা সবসময় বুঝতে হবে এমন কথা নেই। আমরা ক`জন নিজের মনকে বুঝি? আবার অন্যের মন! তবে অনুভূতির একটা মজা আছে। অনুভূতির মজা মুখে বলে প্রকাশ যোগ্য হয়ে ওঠে কম। অনুভূতির কথা অনুভবের ব্যাপার। এই অনুভবের জন্য চাই স্থির মন। অস্থিরতা কবি ও কবিতা দুটোকে নষ্ট করে। ঠিক তেমনে পাঠকের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই একই কবিতা পাঠকভেদে মূল্যায়নের ভিন্নতা দেখা যায়। পাঠকের মানসিক উচ্চতা কাব্যপাঠে সাহায্য করে। মানসিক উচ্চতা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে না গেলে কবিতা দুর্বোধ্যই থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই কাব্য পাঠে যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। শিল্প আজীবন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকেই আনন্দ দিয়েছে এবং দিবে। সাহিত্যের উৎকৃষ্ট শিল্প হলো কবিতা। পাঠকের চিন্তার জগত তার চেতনার চেয়ে বেশি নয় কিন্তু কবির চিন্তার জগত তাঁর চেতনার চেয়ে বেশি, এটা কবির স্বভাবগত। এজন্যই একজন কবি কবি হয়ে ওঠে। চিন্তা মানুষের স্বভাবগত বিধায় তা সাধারণত দৃশ্যগোচর বস্তু দর্শনে সৃষ্টি হয়। তার পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটো দিকই আছে। তবে চেতনার পজেটিভ ছাড়া নেগেটিভ কোন দিক আছে বলে মনে হয় না। চিন্তার জন্ম চোখ থেকে আর চেতনার জন্ম মন থেকে। এটা বলা যায় বহির্দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টির সমন্বয় হলে একজন মানুষ ভালো মানুষ হয় তার কাজে ও কর্মে। কবি মাত্রই ভালো মানুষ কারণ সে কবিতা লেখে। অবশ্য সাধু কবিদের ফাঁকে আজকাল অসাধু কবিও দেখা যায়। সাধু কবি তার চারপাশের পরিবেশের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার মধ্যে কবি মুক্তি খুঁজে পান। সেই মুক্তি বিন্দুমাত্র স্বেচ্ছাচারিতা নয়, কবির অবাধ বিচরণ। এ বিচরণ কবির সমগ্র সত্ত্বায় গেঁথে আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মাঝে। অসাধূ কবি আসলে কবি নয় অসাধু। তারা আসলে ধ্যান ভ্রষ্ট বা সাধনভ্রষ্ট সাধু। তারা সাধুর ভান ধরে আছে। তাই মানুষ মাত্রই কবি নয় আর কবি মাত্রই সাধু কবি নয়।
কবির চিন্তা ও চেতনার গভীরতা কবিতার রসদ। মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। চিন্তার স্বাভাবিক প্রবণতা কবিকে কাব্য শরীর দাঁড় করাতে সাহায্য করে। চেতনা চিন্তাকে পরিশীলিত করে। সম্যক জ্ঞান কবিতায় আনে সুনির্দিষ্ট বার্তা। এ বার্তা প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তা নয়। যেহেতু কবিতার ভাষা মনের ভাষা, এর বার্তাও একান্ত মনোগত। এ বার্তা মানুষের মনের উৎকৃষ্ট অনুভূতির বার্তা। উদ্দেশ্যহীন মনোভাষা আবেগতাড়িত কবিতার জন্ম দেয়। মনের চিন্তাগুলো ভাষা হবার আগে চেতনায় পরিশুদ্ধ হলে কবিতা হয়। অন্যথায় মনের ভাষা ও মুখের ভাষা এক হয়ে যায়। অবশ্য মুখের ভাষা মস্তিষ্ক ও মনের চিন্তা প্রসূত। তাহলে মনের ভাষা ও মুখের ভাষায় পার্থক্য কই? পার্থক্য আছে। আছে বলেই মাঝে মাঝে মনের কথা ঠিক প্রকাশ করে উঠতে পারি না। আমরা নির্বাক হই, ভাষাহীন হই। তাই কবিতা মনের ভাষা। এখানেই কবিতা ও কথাসাহিত্যে পার্থক্য। কবিতা যদি মুখের ভাষা হয়ে যায় তা শিল্পমূল্য হারায়। কবির আবেগ কবিকে সমৃদ্ধ করে যেমন ডুবায়ও তেমন। আবেগের পরিশীলন না হলে কবিতা উর্ত্তীন্ন হয় না। আবেগ বর্ষার জমাট বাঁধা কালো মেঘের মতো। তার একটাই ফল তুমুল ঝরে যাওয়া, চরাচর ভাসানো। কিন্তু বৈশাখের মেঘ অনেক রহস্যজনক। এখন কালো হয়ে এলো আবার এখন ফর্সা হয়ে আসছে। এখন ঢেকে দিল নীল আকাশ, আবার সমহিমায় হাজির। এর মধ্যে একটা ধাঁধা আছে। এটাই কবিতা। তাই কাঁচা আবেগ কবিতাকে বর্ষার মেঘের মতো ভারী করে তোলে, যার ফল সুনিশ্চিত। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী। চিন্তায় আবেগ থাকে, তাই চেতনার দরকার হয়। কবির এমন কোন দায় নেই কবিতায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় বোঝাতে হবে। বোঝাতে গেলেই কবি কাব্য মঞ্চে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কবির চিন্তা ও চেতনার সমন্বয়ে কবিতা হয়। বোঝার দায়িত্ব পাঠকের। না বুঝলেও তেমন ক্ষতি নেই কারণ আগেই বলেছি কবিতার ভাষা মনের ভাষা। তাই মনের ভাষা সবসময় বুঝতে হবে এমন কথা নেই। আমরা ক`জন নিজের মনকে বুঝি? আবার অন্যের মন! তবে অনুভূতির একটা মজা আছে। অনুভূতির মজা মুখে বলে প্রকাশ যোগ্য হয়ে ওঠে কম। অনুভূতির কথা অনুভবের ব্যাপার। এই অনুভবের জন্য চাই স্থির মন। অস্থিরতা কবি ও কবিতা দুটোকে নষ্ট করে। ঠিক তেমনে পাঠকের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই একই কবিতা পাঠকভেদে মূল্যায়নের ভিন্নতা দেখা যায়। পাঠকের মানসিক উচ্চতা কাব্যপাঠে সাহায্য করে। মানসিক উচ্চতা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে না গেলে কবিতা দুর্বোধ্যই থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই কাব্য পাঠে যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। শিল্প আজীবন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকেই আনন্দ দিয়েছে এবং দিবে। সাহিত্যের উৎকৃষ্ট শিল্প হলো কবিতা। পাঠকের চিন্তার জগত তার চেতনার চেয়ে বেশি নয় কিন্তু কবির চিন্তার জগত তাঁর চেতনার চেয়ে বেশি, এটা কবির স্বভাবগত। এজন্যই একজন কবি কবি হয়ে ওঠে। চিন্তা মানুষের স্বভাবগত বিধায় তা সাধারণত দৃশ্যগোচর বস্তু দর্শনে সৃষ্টি হয়। তার পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটো দিকই আছে। তবে চেতনার পজেটিভ ছাড়া নেগেটিভ কোন দিক আছে বলে মনে হয় না। চিন্তার জন্ম চোখ থেকে আর চেতনার জন্ম মন থেকে। এটা বলা যায় বহির্দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টির সমন্বয় হলে একজন মানুষ ভালো মানুষ হয় তার কাজে ও কর্মে। কবি মাত্রই ভালো মানুষ কারণ সে কবিতা লেখে। অবশ্য সাধু কবিদের ফাঁকে আজকাল অসাধু কবিও দেখা যায়। সাধু কবি তার চারপাশের পরিবেশের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার মধ্যে কবি মুক্তি খুঁজে পান। সেই মুক্তি বিন্দুমাত্র স্বেচ্ছাচারিতা নয়, কবির অবাধ বিচরণ। এ বিচরণ কবির সমগ্র সত্ত্বায় গেঁথে আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মাঝে। অসাধূ কবি আসলে কবি নয় অসাধু। তারা আসলে ধ্যান ভ্রষ্ট বা সাধনভ্রষ্ট সাধু। তারা সাধুর ভান ধরে আছে। তাই মানুষ মাত্রই কবি নয় আর কবি মাত্রই সাধু কবি নয়।
কবিতার
নির্দিষ্ট কাঠামো আছে, এ যেমন সত্যি, সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েও কবিতার
ক্যানভাস রঙিন করে তোলা যায় শব্দ ও ভাবের সুষম সমন্বয়ে। শব্দের শক্তি
সম্পর্কে অবগত হওয়া একজন কবির বেশ প্রয়োজন। কবিতার বড়ো পরিসর গ্রহণে খুব
অনীহা। তাই ছোট ক্যানভাসে কবিকে ফোটাতে হয় যতনের সাথে। যাকে কবিতা হতে হয়।
শব্দ যুগপৎ দৃশ্য ও ভাবের জন্ম দেয়। শব্দের মধ্যে দৃশ্য খুব সহজে ধরা দিলেও
ভাবের ক্ষেত্রে তেমনটি না। একটি শব্দ পুরো একটি ভাবকে ধারণ করতে পারে না।
শব্দের সাথে শব্দের বন্ধুত্ব না হলে ভাব মাঠে মারা যায়। কবি পাঠককে কবিতার
ভেতরে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়। তাই কবিতায় কবির ভাব সুপষ্ট করতে হলে শব্দের
গাথুঁনি হতে হয় যুৎসই। শব্দের পরশে শব্দের অর্থগত পরিবর্তন ঘটে। যা তার
শাব্দিক অর্থকে ছাড়িয়ে যায়। উপহার দেয় নতুন কিছূ। এখানেই কবির সার্থকতা।
কবির অন্তর্জগতে প্রতিটি শব্দ জোনাকি হয়ে জ্বলে যা বহির্জগতের সাথে সঙ্গতি
সুসংহত করে তোলে। মাঝে মাঝে শব্দে শব্দে গড়ে ওঠে ধাঁধা। কবিতার ভাবে লাগে
বহুরৈখিকতার পরশ। কবিতার ভাবের বিভিন্নতা কবিতাকে রহস্যময় করে তোলে। কবিতার
এ রহস্য চিরন্তন। স্বভাবগতভাবে কবি এ রহস্যের খেলা রপ্ত করেন। কবি খুব সহজ
কথায় অনেক মূল্যবান ভাব প্রকাশ করতে পারে। মূল্যবান মানে সৌন্দর্যের
মূল্য। যা একান্তই মনোগত ব্যাপার, উপলব্ধি করতে পারলে ভালো লাগা কাজ করে।
ভালো না লাগলে কবিতা ব্যর্থ হয় সাথে কবিও। শব্দের সুষম সমন্বয় কবিতাকে
ফুটিয়ে তোলে ভোরের সূর্যমুখীর মতো আবার শব্দের বাহুল্য বা অসমন্বয় কবিতাকে
ডোবায়। অপ্রয়োজনীয় শব্দ কবিতাকে মেদবহুল করে, কবির আবেগ কবিকে এই ভুল করিয়ে
নেয়। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী।
কলম খাতার কাছে আসলেই কবিতা হয়
না, হয় কথা। শুধু কবির কলম ও খাতার মিলনে কবিতার জন্ম হয়। কবি মানুষের
অভিন্ন কিন্তু চিন্তা ও তার রূপায়নে ভিন্ন। দৃশ্যমান সবকিছু কবি অন্য
দশজনের মতো দেখে এবং বোঝে কিন্তু একজন কবি তা কালিতে চমক দিতে পারে বলে সে
কবি। কবির মানসিক সত্তা ও সামাজিক সত্তার মিল অমিলের কারণে কবিতা আসে।
কবিতা হয়ে যাওয়ার বিষয়। মূলত কবিতা শব্দ ও ভাবের অনুপম কলা। সেই কবিতার
সাথে সামান্যতম কৌশল কবিতাকে দিতে পারে অন্য মাত্রা। তবে কবিতা কি কৌশল?
উত্তরঃ না। তবে কবিতায় কিয়দাংশ কৌশল প্রয়োজন পড়ে। কবির দৃশ্যগত বা চিন্তাগত
বা দর্শনগত পীড়ন সবসময় কাজ করে। এসবের সমন্বয়ে একটি ভাব তৈরি হয় যা শব্দের
ডানায় চড়ে ক্রমাগত কবিতার আকাশে উড়ে যেতে চায়। জন্ম হয় কবিতার। এ পুরো
প্রক্রিয়ায় আবেগের সংযোগ বা বর্জনের, শব্দের দ্বন্দের বা বন্ধুত্বের, ভাবের
সৌন্দর্যের বা ব্যর্থতার কৌশলে আবর্তিত হয়। কাব্য উদ্দীপনার পরের
ব্যাপারটি কৌশল। কাব্য কৌশল। এ জন্য কবিতা কল্পনামূলক শব্দ গ্রহণ করে। যে
শব্দে রয়েছে যুগপৎ ভাবের রহস্য ও সৌন্দর্যের ঝিলিক।
ছন্দ শব্দকে
সুগঠিত করে কবিতাকে দেয় একটি ফর্ম। কবির মনে একধরনের সুর কাজ করে। এ গানের
সুরের মতো নয় যেন ঠিক। কবিতার সুর। কবিতায় এ সুর ধ্বনিত হয় শব্দে শব্দে। এ
সুরই কবিতার ছন্দ। একজন কবি মেপে মেপে নয়, প্রকৃতিগতভাবেই এটা রপ্ত করেন।
যদি অন্তরে সুর খেলা করে, কবিতায় ছন্দ আসবেই। কবিতায় থাকবে চিত্রকল্প বা
কল্পচিত্র। শব্দের সহজ সমন্বয়ে যা গড়ে ওঠে। এ চিত্র একান্তই কবির আশেপাশে
ছড়িয়ে আছে। কবিতায় তা ধরার জন্য চাই সহজিয়া মন ও মনন। খুব সাধারণ চিত্র
কল্পনায় ফুটিয়ে তোলা যায় অসাধারণ করে। এ ক্ষেত্রেও কবিকে সেই চিত্রকে
ফোটানোর জন্য যুৎসই শব্দের সমন্বয় জরুরী হয়ে ওঠে। কবি তা পারে। কবির অদ্ভুত
এ ক্ষমতাটি রয়েছে। না বলা কথা সে বলে দেয়, না বোঝা কথা সে বুঝিয়ে দেয়।
শব্দমেদ
যেমন কবিতাকে কাব্যরসহীন কওে ঠিক তেমনি ভাবের বিচ্ছিন্নতার মাঝে কবি
শৃঙ্খলা তৈরির মুন্সিয়ানা দেখাতে পারলে কবিতা সার্থকও হয়ে ওঠতে পারে। তবে
তা কবির কাব্যশক্তিতে নিহিত। কাব্যশাসন কবিতাকে নিরোগ করে। কবিতাকে বাঁচায়
বিচ্ছিন্নতার বলি হতে। কবির কাছে শব্দ ফুলের মতো। যার আছে সৌন্দর্য ও
কোমলতা। কবির সুন্দর চেতনা জরুরী। কবিতা শিল্পটাই মূলত সুন্দরের শিল্প। এ
শিল্প কবির ভাষাবোধকে সমৃদ্ধ করে।
কবিতে সময় সচেতন হতে হয়।
কবিতায় সময়কে ধারণ করতে না পারলে কবি ব্যর্থ। এই ধারণের ব্যাপারটি হতে পারে
কবিতার বিষয়, অঙ্গিক ভঙ্গি এসবের সমকালিন প্রবণতাকে ধারণ। কবির একটি দেশ
থাকে। যে দেশের আলো বাতাসে সে বেড়ে ওঠে। যার মাটির উপর হামাগুড়ি দিয়ে
হাঁটতে শিখেছে। আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, বর্ণিল সংস্কৃতি। একজন কবি এর
সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, খোঁজেন সংগতি আর অসংগতি। কবিতা এ সবের
প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে সুপ্রাচীন।`চর্যাপদ` হতে বাংলা কবিতার যাত্রা।
চর্যাপদের সময় হতে এ পর্যন্ত রাশি রাশি কবিতা রচিত হয়েছে শত শত কবির
হাতে। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনাকে ধরতে হলে কবিকে সাঁতার দিতে হবে এ
কাব্য সমুদ্রে। বুঝে নিতে হবে কবিতার বাঁক ও প্রবণতা। প্রাচীন ঐতিহ্য ও
সংস্কৃতিকে পুঁজি করে সমকালিনতার উপর ভর করেই কবিতাকে অনন্তের মুখ দেখাতে
হয়। শেকড়জাত বিষয়গুলো কবিতায় নিয়ে আসার আলাদা কোন কৌশল নেই। কবিকে এ
ব্যাপারে কোন অত্যধিক প্রচেষ্টারও প্রয়োজন পড়ে না। এ বিষয়গুলো আপনাআপনি আসে
কারণ একজন কবি তাঁর শেকড়ের উপর ভর করেই বেড়ে ওঠে। শেকড়জাত চিন্তনে,
ভাষ্যে এসবের চিত্র ফোটে। কবির কাজ শুধু কবিতা লেখা নয়। আর দশজনের মতো
তাকেও যাপন করতে হয় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার জীবন। যাপনের আনন্দ বেদনা
কবিতায় আসে। এসবের মাঝে আমাদের ঐতিহ্য চেতনা সচেতনভাবে ঢোকাতে হয় কবিকে।
তাই আমাদের শেকড়জাত বিষয়গুলো নিয়ে পঠন-পাঠন জরুরী। তাই কবিকে পড়তে হয় বেশি
লেখার চেয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন