মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

শেখর দেব এর কবিতা




শেখর দেব এর কবিতা


স্মৃতির ধুলো


(শাখীকে)


এখানে নবীন ঘাসের ডগায় জমে থাকা জলের
কোন বিমুগ্ধ ইতিহাস জানা নেই
জানতে চেয়েছি জন্মের স্মৃতি
কিংবা আরো পুরনো জন্মের ইতিহাস
নিশ্চুপ জল গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেল শেকড়ে।
যে আমাকে ছেড়ে গেছে
অথবা ছেড়ে যাবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে
নিজেকে করেছে নতুন আলাদা
তার কাছে কী লুকিয়ে রেখেছিলাম আজ মনে নেই।
সুনীলের বোষ্টমী হয়ে অসমাপ্ত রেখে যায় জীবনের গান
তার হাত ধরে-কেনো পথে নামিনি-তাই ভাবি আজ।
কালো কোন রঙ নয়
তবুও তার অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে বলো-
আমি আর অমন কী সুন্দরী-সব মেকাপের মুগ্ধতা
অথচ তোমার দুচোখে ভেসে ওঠে গত জন্মের স্মৃতি
চেনা পথ মুছে গিয়ে ক্রমশ হয়ে ওঠি নিমগ্ন জাতিস্মর।
বিগত জন্মে ভাটির পথে যখন হেঁটেছি লালনের সাথে
জীবনের বিবিধ দর্শনের ভেতর
তোমাকেই পেয়েছিলাম সাধন সহযাত্রী
শ্যামা রঙের সৌষ্ঠবে কেটেছে সুনিপুণ সাধনা।
অথচ আজ তুমি ফুটে আছো নতুন গোলাপ
ব্যাবিলনের উদ্যান ঝুলে আছে কাজল চোখে
শূন্যের দিকে দৃষ্টিপাত করে ছুঁয়েছো অসীম সীমানা
তোমার লিপজেল ঠোঁটে হয়ে ওঠি মদনমোহন।
অসহায় ঘুরে বেড়ানো পথের ঘাসে যে জল জমে থাকে
আর নিমেষে হয়ে যায় লীন
তার নাম দিয়েছিলাম শিশির
তুমি জানো না- এসবের কিছুই জানো না
এ জনমে কীভাবে কাটাবো বাকিটা পথ...



জীবন জেলে


পাপের কোন সংজ্ঞা নেই
আছে শুধু নিষিদ্ধ আরাম
পুণ্য আর পাপের মাঝে যে সেতু
তার নিচে বয়ে গেছে নদী
সেই নদীর জেলে হয়ে
কেটে যাক বাকিটা জীবন!





বোশেখের শোকগাথা


উৎসবের মেঘ-রাঙা দিনগুলো ফিরে আসে নিবিড় চেতনায়। রঙিন ঠোঁটের রঙে ঝিলমিল চারিধারে বাজে
বাহারি সুর আর প্রেমময় সোঁ সোঁ হাওয়া। উত্তাপের বোশেখী মমতা জড়িয়ে মধুর চিত্ত সুধা ডালে বটের
ছায়ায়। ভোরে সূর্যের সমুখে দাঁড়ানো আমার পা ছুঁয়ে চেয়ে নাও আগামীর অজানা সময়। দুহাতে তোমাকে
তুলে কপালে চুমু চিহ্ন এঁকে দিয়েছি বুকের অনন্ত অনুরাগ।
আট বছর কেটে গেছে বাহারি বন্ধুর পথ...
রঙিন পাঞ্জাবি পাশে লাল পেড়ে শাড়ি নেই। আরো দূরে ঘোরে মাঠের মেলায় নিমগ্ন মানুষ। নাগরদোলার
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে মাতাল কিশোরী ঠিক খুঁজে পায় বেভুল মুগ্ধতা আর বিদগ্ধ বেলা। তুমি শুধু উড়ে গেছো
রঙিন বায়ুর বেলুন।
বোশেখের বিনম্র বেদনা ছেড়ে যাবো কতদূর? কোথায় পাবো সেই নগ্ন অনামিকা আর স্নিগ্ধ ললাট। রেখেছি যতনে
যারে নির্ভার মন সঁপে সে যদি জানে না বুঝে না বলে চলে যায় দূরে। বিদগ্ধ বুকে প্রশান্তি হারায়ে বোশেখের
রৌদ্র প্রতাপে হায় হায় করে বয়সী বাতাস।
কোনদিন আমলে আসেনি অনামিকা স্বর্ণশোভা। জানিনি গোপন ব্যথা জড়িয়ে রয়েছে হাত। বুঝিনি কতো ব্যথা দিতে
পারে বোশেখের রাত। আংটি যে কোরে দিল এতো কিছু অদল বদল।




রাতুল প্রহর

বিনিদ্র রজনী অাঁকে কামক্লান্ত চোখ


নিখুঁত কালো জমে উজ্জ্বল শিরায়
তারা যদি খসে যায় আপাত নিয়মে
অাঁধারে খেলা করে অনন্ত অভিমান।
উড়ে গেছে যে ডাহুক ঝোপের আড়ালে
তার তরে কেবা গায় বিলাপের সুর
জল আছে হাওয়া নাচে হৃদয় ফুলে
খোঁজ করো যতো পারো নতুন আবেগ।
ভোরগুলো তাজা প্রাণে হউক অম্লান
ঝলমল রোদ ওঠে হীরক আমোদ
পেছনের সুর ভুলে সমুখ সমর
তলোয়ার গুনে শুধু রাতুল প্রহর!



শ্মশানে দাঁড়াতে নেই


শ্মশানে দাঁড়তে নেই
দেখাতে নেই আঙুল
মাটিমগ্ন মানুষেরা প্রাণের গন্ধে নড়ে ওঠে
মনে পড়ে যায় লৌকিক সংসার
নিবিড় চুমু অথবা সঙ্গম
বেড়া ঘেরা দেহগুলো কাঁপে উলাসে।
শ্মশানে দেখাতে নেই আঙুল
দাঁড়াতে নেই ক্ষণিক
নচেৎ মাটি আর মানুষ ক্রমাগত আলাদা হয়ে
নড়ে ওঠে লতানো পাতার প্রাণ
অস্বীকার করে ইহকালীন সম্পর্কগুলো!
শ্মশানে যেও না মানুষ
কবরের খবর না পড়ে
মানুষের কাছে যাও

খুলে যাবে মুক্তির পথ।

সোমবার, ২৩ জুন, ২০১৪

শেখর দেব এর পাঁচটি কবিতা

শেখর দেব এর পাঁচটি কবিতা

শামুক মুখ


এতকাল পরে ভাটির শামুক এক
মৃদু পায়ে চলে চর হতে লোকালয়
শহরে বীর্যের ঘ্রাণমগ্ন পোকাদের ভিড়
পথে পথে পথিক স্বার্থের ধুলোয়
অচেনা সুর নিয়ে চলে যায় একা।

দুধেল শরীর আর বাহারি আমোদ নিয়ে
বেড়ে যায় শামুকের মুখ
জলের স্রোতে টিকে থাকে কংক্রিট দেহ
তীক্ষè চুম্বন ছুঁয়ে সহসা সমুদ্র যাপন
আর গণহারে মৎস্য সঙ্গম।

পাখিদের দেহবিদ্যা


নতুন দোলায় দোলে পাখি
ডানার হাওয়ায় নাচে অমারাত্রির ঘোর
বিবিধ বিজারণে লাগে প্রাচীন সুর
রাতগুলো তোমার বিনিদ্র চুলে হাহাকার।

যেপথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন জড়ো হয়
সেখানে জ্বলে ওঠে হন্তারক আলো
যার কাছে তেজোদীপ্ত মুদ্রাগুলো
নিমেষে নুয়ে পড়ে অসহায়।

তোমার পাখি জীবনে
নিজেকে ভেবেছি গাছের শাখা
শেকড়ের কথায় উদাসীন হতে না পেরে
ব্যর্থ হয়েছে বিবিধ উড়ালবিদ্যা।

মেঘের কাছে রেখেছিলাম যাপনের গন্ধ
বৃষ্টির ধারায় সে বলে গেল-
মহান মানুষীরা উড়ে যায় দূরে
পড়ে থাকে অসমাপ্ত আয়োজন
আর দেহবিদ্যার তুমুল কসরত।
 

বাঁশিবিদ্যা


সখিনা বোঝে শুধু মমতার ভাষা
পিচ্ছিল সুখ নিয়ে হাওয়া দোলে
মন ছোটে চারিদিক নরোম আরাম।

নাতিদূর দেহ ভেলা আনত ভুবন
নড়েচড়ে রমরমা দেয় প্ররোচণা
বায়ুবেগে বেজে ওঠে সুরের বাঁশি।

সুর ওঠে রঙ লাগে বর্ণিল তান
গান হয় জল বাজে মরম জ্বলে
ঘোর লাগে ঝিম ধরে সুরার মন।

 

রাতুল স্বর


সময়ের হাতে হাতে বেড়ে ওঠে নতুন নিয়তি
নিদাগ মননে লাগে কতো বিনোদন- নিশিদিন
গাঁয়ে ফিরি মেঠোপথে স্বপ্নবাজ- উদোম বালক
যেখানে পুকুর আর মাছ ধরা জাল- মাছরাঙা।

উড়ে যায় বিলের বলাকা নিখুঁত নিয়ম মেনে
উঠোনে বিকেল নামে লালরাঙা- কবুতর ডানা
জানালার পাশে বসে পরিচিত আলো ঝলমল
মেহগনি গাছে, জ্বলে গেছে ভোর- অন্তিম আগুন
চোখের আলোয় নিভে যায় দিদির দলিত মন।

পুকুর ঘাটের কথা বলব কী! চিনেনি আমায়
কামরাঙা গাছ শুধু হেসে হেসে তির্যক দুলেছে
ওপাড়ার সনাতন সুধিজন হেঁটে গেছে পাশে।

বেড়েছি দারুণ স্রোতে সময়ের তালে- ভদ্রলোক
শিমুল তমাল আমি উঠেছি উঁচুতে ভাসমান
হয়ে গেছে ছোট সব পুকুর গুদাম গোলাঘর
চেনা পথ সুর তোলে অচেনারে ডাকে অনায়াসে
কান্নার কেমন স্বর চুপচাপ রাতুল বেদনা।

ভালোবাসা ছাড়া নাই কোন ফুল


ফুলের কাছে তার গন্ধযাপনের
অম্লান ইতিহাস জানতে চেয়ে
ঈশ্বরের পুজোতে বলি দিয়েছি
পাশবিক প্রেম।
সেই থেকে মসজিদের আযান আর শাঁখের শব্দে
যুগপৎ বেদনায় ডুবে যাই
        ফুলের নির্মোহ অন্তরে।

অন্ধ আর বধির প্রেমের শরীর নিঙড়ে
            নির্বাণের ঘোরে
ফুলের সহজাত স্নিগ্ধতার ভেতর
জেগে আছে
ভালোবাসার সুন্দর অন্দর।

এতকাল ঘুরে ঘুরে বুঝেছি
পৃথিবীর অসীম অন্তরে
যে ফুল ফুটে অছে
নাম তার ভালোবাসা ভালোবাসা।

শেখর দেব-এর ছয়টি কবিতা








পকেটে নীরবে শুকালো যৌবন...


পকেটে নীরবে শুকালো যৌবন... শেখর দেব-এর ছয়টি কবিতা
শুকানো শিহরণ

শিউলি ফুলের আবেগ পকেটে রেখে এসেছি মুগ্ধতালয়ে
ইঙ্গিত-কলা বোঝাবার ভাষা বোঝনি তেমন
হিসেবের খাতায় এঁকেছি ব্যর্থতার ফুল
পকেটেই শুকালো শিউলি
বেলা যেতে যেতে উঁকি দেয় বাড়ন্ত বুক - শিহরণ জ্বালা
তবু ছিলাম কাছে তার গাঁথা হলো না কোন মালা।

এতদিন পর কেন তবে ডাকো
শিউলি আর ফোটেনা তেমন
পকেটে নীরবে শুকালো যৌবন...

এখন কেন কথার ঝুড়ি উছলে ওঠে বুকের বাঁকে
ঠোঁটের মায়া নিয়ে গেছে অন্য বুকের কোমল গানে
ডেকোনা আর নষ্ট নীড়ের সুখের মোড়ে
আছিতো বেশ প্রিয়ার বুকে কারণে বা অকারণে।


রাহুশনিময়

নতুন জীবনের কথা শুনেছি কতো
রহস্যের ধারাপাতে
জন্মাবধি দৈহিক সুখে লেগেছে শনি
কিংবা রাহুর রাত্রি
অথবা
দুইয়ের মিলনে হয়েছে শুভাশুভ সব ভণ্ডুল
ছোটবেলায় ছাগশিশুর বদলে
শনির কাছে ভিক্ষে চেয়েছে অনন্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যত
তীব্র কাঁপন দিয়ে জ্বর এলে
মাকে দেখেছি দিশেহারা
মনের মানসে।

সেদিন মশার পিঠে চড়ে এলো রাহু
শনিসমেত শুরু হলো তাণ্ডব
মা কালি তার লকলকে জিবে চেটে নিবে সব...
সেদিন জোড়া কবুতরের বিনিময়ে
মা  ভিক্ষে নিয়ে এলো
নতুন জীবন।

অদৃশ্য শূন্যতায় চলে রাহুশনিময় সংসার
এসবের কিছুই বুঝিনা সাংসারিক কারবার।


নিস্বার্থ প্রয়াস

কতোটা রিক্ত করে তোমাকে দিলে
মন
বলবে করেছি কিছু তবে
প্রাধান্যের মাত্রা কতোটা গভীর হলে
একবার
বলবে তবে করেছি
হাতের মুঠোয় গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে
যেই তোমাকে দেখাই
বায়বীয় হয় সমস্ত প্রয়াস।

স্বার্থের  সুতো তোমার হাতে দিয়ে
বলেছি:
বড়ো বেশি তুমি আমার
আলিঙ্গনের ভেতর
ফুলের মতো ফুটে থাকা নরোম যুগলে
ঠোঁটের নিস্বার্থ প্রয়াসে তুমি আন্দোলিত হলে
নিবিড় নীরবতায় খুঁজে পাও অনিন্দ্য আমেজ
বলো: ভালোবাসি ভালোবাসি প্রাণনাথ।


ঘুমকাব্য

ভোর  হলেই ঘুম ভাঙানোর অপেক্ষায় শুয়ে থাকো অনাবিল আনন্দের ভেতর
বালিশের অবিকল একটা স্বপ্ন মাথায় গুঁজে নড়ে চড়ে ওঠো
হাসির বিস্তার ঘটে নীরবে - জেগে জেগে চুষে নাও স্বপ্নের মধু।

তোমার দেহে জাগরণের সৌরভ নেবো বলে একবার
ঘুম ভাঙনিয়া পাখি স্বপ্ন চুরি করে পালালো
সমূহ সমর্পন জ্বালা নিয়ে শেষে
খুঁজেছো ঘুমের আমোদ বালিশে বালিশে অবিরাম
এখন সারারাত জেগে জেগে কাটে - ঘুম আসে ভোরে শিশিরের অবিকল।


এটি কবিতা নয় শান্তি

কিছু কথা একদম কবিতা হয় না
অথবা কিছু খুব কবিতা
মোক্ষলাভের একটি ব্যাপার নিয়ে হয় না কবিতা
তখন নির্বাণের কথা বলে দেখি কি হয়
কোন কিছুতে ফিদা হবার অমোঘ ঘটনা ফাঁস করে দিলে
কবিতা হয়ে যাবে
আজকাল নিজেকে বড়ো বেশি কবিতা কবিতা মনে হয়
জাগতিক স্রোতের প্রতিকূলে হেঁটে লাগে বেশ
তোমাকে বোঝার চেষ্টা কবিতার থিসিস
অর্থহীন তুমি ঘোর মায়াময় গুহা
গুহার ভেতরে কবিতা নয় বরং মদের দেহ দরিয়া
মোক্ষলাভ বা নির্বাণ কোনটাই হবে না বাকি জীবনে
হতে পারে কবিতা - কবিতা জীবন অথবা জীবন কবিতা
কোন কিছুই কবিতা মনে হয় না
অথবা সবকিছুই কবিতা
মানুষ কবিতা নয় বড়ো বেশি শান্তি খোঁজে
এটি কবিতা নয় শান্তি
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি...


পরিষ্কার আঁধার

আঁধার মানে আলোর চেয়ে বেশি কিছু
আলোকিত চারপাশ - পরিষ্কার নয় সবকিছু
আঁধারে হারানো হলো অদৃশ্য আলোর ভেতর ডুবে যাওয়া
দৃশ্যমান দুনিয়ায় কতোটা ধরে চোখে
আঁধারে যতোটা ধরে অফুরান
তার ভেতর অনাবিল সুন্দর - পরিষ্কার আঁধার
আঁধারে যতো আনন্দ তার কিছুই নেই আলোতে
চলো আঁধারে বাধিঁবো ঘর - আঁধারে আদর

বাংলাদেশ সময় : ১৩৩২ ঘণ্টা, ৩১ মার্চ ২০১৩

শাঁখ (প্রথম সংখ্যা)

Book-01
শেকড়ের সঞ্জিবনী স্লোগান বুকে ধারণ প্রকাশিত হলো ‘শাঁখ’-এর সূচনা সংখ্যা। সাড়ে ছয় ফর্মার এ লিটলম্যাগ উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত দুই লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। প্রবন্ধ লিখেছেনÑ সাজিদুল হক, নাজমুল হুদা মজুমদার, শাহিদ হাসান, সাগর শর্মা, অনুপম চৌধুরী, শেখর দেব, অপরাজিত ফেরদৌস। কবিতা লিখেছেনÑ রিজোয়ান মাহমুদ, হাফিজ রশিদ খান, সাজিদুল হক, শাহিদ হাসান, আরণ্যক টিটো, আলী প্রয়াস, মনজুর কাদের, মনিরুল মনির, পিয়াস মজিদ, সেলিম রেজা, জিয়াবুল ইবন, রইস মুকুল, আনিফ রুবেদ, আজিজ কাজল, নিলয় রফিক, শঙ্খচূড় ইমাম, অরবিন্দ চক্রবর্তী, অয়ন আয়শ, শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, রতœদীপা দে ঘোষ, মাসুদ খান, রহমান হেনরী, কচি রেজা প্রমুখ। গুচ্ছকবিতা লিখেছেনÑ খালেদ মাহবুব মোর্শেদ, চন্দন চৌধুরী, অনুপম চৌধুরী, ইয়াসিন আরাফাত, শেখর দেব। সোপী হান্নাহর কবিতা অনুবাদ করেছেন শেখর দেব। ৩৫টি রুবাইয়াৎ লিখেছেন শামসুল আরেফীন।
সদ্য প্রয়াত দুই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী ও স্মৃতিচারণমূলক গদ্য লিখেছেনÑ শিশির শতাব্দী ও জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায়। চলচ্চিত্র নিয়ে লিখেছেনÑ ইয়াসিন আরাফাত ও শেখর দেব। অনুগল্প লিখেছেনÑ জাহেদ মোতালেব, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, রহমান জর্জি। গল্প লিখেছেনÑ শোয়ায়েব মুহামদ, পিন্টু রহমান, ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ।
শাঁখ, সম্পাদক : শেখর দেব, প্রচ্ছদ : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৩, মূল্য : ৪০ টাকা।

নিখুঁত আঁধার // শেখর দেব



নিখুঁত আঁধার
 
শেখর দেব
 
রাতের নিপুণ আঁধার হাতে
রচনা করেছি কিছু স্বপ্ন আর
প্রার্থিত পরিখা
সুরের অন্তরে যুদ্ধের মন
প্রাচীন আলোয় ওঠে মেতে
উদাস মুদ্রায় লাগে পুরনো প্রণয়।
 
তোমার বিছানা করে আকুলি বিকুলি
আসন্ন আগুনে মাতাল পাখি
হঠাৎ ফিরে যায় সুলভ সুন্দরে
যেখানে ছিল অসীম আশ্রয় আর
তরমুজ রাঙা মায়াবী মোহের শরীর।
 
কপালে নিখুঁত সিঁদুর নিয়ে
রমনের তরে রাধা হয়ে
নিষিদ্ধ ব্যথা আর দিও না বুকে
ছেড়ে দাও তিল তিল পোড়া
আগুনের ফানুস।
 
হয়তোবা ছাই হয়ে বিরহী রাতে
উড়ে এসে দিয়ে যাবো নিখুঁত আঁধার।

কবি শেখর দেব’র প্রেম ক্রমশ বউ হয়ে ওঠার যন্ত্রণা থেকে // কাগজের রোকন



সময়টার শক্তিজাগানিয়া কবি শেখর দেব’র প্রথম কবিতার বই বেরুচ্ছে এবারের বই মেলায়। কবিতার বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার। কপালের শ্রুতিলিপি, নিবিষ্ট নিনাদ, শ্বাসবিদ্ধ শঙ্করাসহ অনেক নামের মাঝ থেকে তাঁর প্রথম বউ সন্তান বইটির উপযুক্ত নাম রাখা হয়েছে ‘প্রত্নচর্চার পাঠশালা’।
নামের ভেতরেই অঙ্কিত দেখাযায় যুব নারী সুন্দর গুলো।
কবি শেখর দেব তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ প্রেমের প্রতিক্রিয়া
আমার একটি বউ হবে হবে করে প্রেমের বয়স হলো প্রায় দশ বছর। দশটি বছর তিল তিল করে গড়েছি আদর ও ভালোবাসা দিয়ে। বউটি আগাগোড়া কবিতা। অবশেষে বউটি আমার আসছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এক গুণী শিল্পী তাকে তুলির ছোঁয়ায় সাজিয়েছে দারুণ। বউটি আমার ঘরে এনে সবাইকে দিয়ে দেব, যারা যারা নিতে চায়। তার বুকে আছে রমনীয় প্রত্নগন্ধ। তার শরীরে আছে মাতাল সোঁদা গন্ধ। তার প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে হাত বুলিয়ে আমি পুলকিত হই। আপনারাও মুগ্ধতার মত্ততায় হারাবেন আশা রাখছি। মূলত আপনাদের হাতে তুলে দেওয়াই বাসনা। যদিও খারাপ লাগছে নিজের বউ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেব ভেবে। কি করা বউ এর নিয়তি! একটু পর তার অবয়ব খানি আমার প্রোফাইলে শোভা পাবে।
____________________
উপরের 'বউ'গুলো 'বই' হয়ে গেলে দারুণ হয়।
আমি কিন্তু এতো উদার বা পাগল নই!!!!”

প্রকাশ পূর্ব একটু পাঠে বেশ জোরালো ভাবে মনে হয়েছে প্রত্নচর্চার পাঠশালার কবিতাগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজস্ব ধরণের আলাদা বলে মনে হয়েছে। এই সময়ের কবিতায় সংগ্রহে রাখার মতো কাজ হচ্ছে- এই খুশিতে আমিও বেশ আনন্দিত।
এবার তার একটি কবিতা পাড়া যাক

কাঠের সিন্দুকে জ্বলে লাখবাতি। অন্নপূর্ণার হাসিতে কোকিল
ডাকে ধানের গোলায়। পরিপাটি ধুতির ভাঁজ; জ্বলে হাসি সুখের
বাতি। রঙিন আঁচলে দেখা দীঘির দীঘল ঘাট সব জানে।
শিমুলতলায় ঝরাপাতা করবন্দি করে পেয়েছি সুদীর্ঘ আয়ু।
গন্ধরাজের বাগানে প্রজাপতি-চোখে খুঁজেছি তৃষ্ণাবিনাশী নদী।
অবশেষে সেই নদীতেই হারিয়েছি সব।
শুভ্র বসনা দিদির সন্তানেরা নিয়ম ভেঙে গড়েছে দিনরাত। আঁধার
সিন্দুকে জমা আছে দাদার শোক, দিদির দীর্ঘশ্বাস।

-লাখবাতি/ শেখর দেব / প্রত্নচর্চার পাঠশালা

কবি শেখর দেব লিখছেন দীর্ঘদিন থেকে, তবে প্রচলিত অর্থে বই আকারে লিখেনি। কবিতাগুলো বিভিন্ন সময় জন্ম নিলেও বইটা এখনো দেবজীর পেট হতে বেরোয়নি। মাত্র ক’দিন বদে মেলা শুরু। যদ্দুর জানি আগামী মেলার পাঠসূত্র থেকে যে কোন একদিন বইটি বাজারে চলে আসবে। আর প্রচ্ছদে লিখেছেন কবি এজাজ ইউসুফী..বিষয়টা বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই।

বাঁশিবিদ্যা

বাঁশিবিদ্যা


সখিনা বোঝে শুধু মমতার ভাষা
পিচ্ছিল সুখ নিয়ে হাওয়া দোলে
মন ছোটে চারিদিক নরোম আরাম।

নাতিদূর দেহ ভেলা আনত ভুবন
নড়েচড়ে রমরমা দেয় প্ররোচনা
বায়ুবেগে বেজে ওঠে সুরের বাঁশি।

সুর ওঠে রঙ লাগে বর্ণিল তান
গান হয় জল বাজে মরম জ্বলে
ঘোর লাগে ঝিম ধরে সুরার মন।

শেখর দেব এর কবিতা


<p class="MsoNormal"><span style="font-family:Vrinda">শেখর</span> <span style="font-family:Vrinda">দেব</span><span lang="BN-BD" style="font-family:Vrinda;
mso-bidi-language:BN-BD"> এর</span><span lang="BN-BD"> </span><span style="font-family:Vrinda">কবিতা</span></p>
গোলাপ-ঘুম

অবাধ্য বেদনা হতে সরে যায় প্রাত্যাহিক বিকেল
সতেজ গোলাপের শুকিয়ে যাওয়া দেখে
পুস্তকের সাজানো অক্ষরগুলো
বিষাদের অন্তর্গত সুখের মাঝে হারায়

ঘুমের বিবিধ ব্যঞ্জনের মহিমা নিয়ে জেগে ওঠে
বিচ্ছিন্ন বিকেল আর অসীম প্রেম

সফেদ গোলাপের সমুহ গন্ধ নিয়ে
পরিপাটি পুস্তক হাতের তালুতে মেলে ধরে
তার নির্ণিত বিষাদ
                                আর
                                   পরম আকুতি

সমস্ত চেতনা তার বিম্বিত দেহে মিশে গেলে
বিষাদ-সুখ নিয়ে গোলাপ
নির্ভরতার বুকে নিমেষে কুঁকড়ে যায় সলাজে

ভালোবাসা ছাড়া নাই কোন ফুল

ফুলের কাছে তার গন্ধযাপনের
অম্লান ইতিহাস জানতে চেয়ে
ঈশ্বরের পুজোতে বলি দিয়েছি
পাশবিক প্রেম
সেই থেকে মসজিদের আযান আর শাঁখের শব্দে
যুগপৎ বেদনায় ডুবে যাই
                                ফুলের নির্মোহ অন্তরে

অন্ধ আর বধির প্রেমের শরীর নিঙড়ে
                                                নির্বাণের ঘোরে
ফুলের সহজাত স্নিগ্ধতার ভেতর
জেগে আছে
ভালোবাসার সুন্দর অন্দর

এতকাল ঘুরে ঘুরে বুঝেছি
পৃথিবীর অসীম অন্তরে
যে ফুল ফুটে অছে
নাম তার ভালোবাসা ভালোবাসা

নীলকন্ঠ

তুমি এমনি চুপ রয়ে যাবে জানলে
ফুলের স্নিগ্ধতাকে বুকে নিয়ে হতাম উদাও
শিরার আহুত শিহরণে লাগিয়ে দিতাম তুমুল হোলি
অথচ আকাশে সুগোল চাঁদ পেয়েও হাতছাড়া হয়ে গেছে নিশ্চিত নির্বাণ
কতদূরে যেতে পারি
বিষাদের বিশদ বুক হতে কোন বিকেল ছিনিয়ে
যদি মন্থনে মন্থনে উঠে আসে বিষাক্ত নীল  
তবে নীলকন্ঠ হয়ে কেটে যাবে বাকিটা জীবন

প্রবন্ধ : কবিতার চিন্তা ও চেতনা

 শেখর দেব-এর প্রবন্ধ : কবিতার চিন্তা ও চেতনা  


<p class="MsoNormal" align="center" style="text-align: left;"><b><span lang="BN" style="font-size:12.0pt;line-height:115%;font-family:" siyam="" rupali";mso-bidi-language:="" bn"="">শেখর দেব</span></b><b><span lang="BN-BD" style="font-size:12.0pt;line-height:
115%;font-family:" siyam="" rupali";mso-bidi-language:bn-bd"="">-এর প্রবন্ধ : </span></b><b><span lang="BN" style="font-size:12.0pt;line-height:115%;font-family:" siyam="" rupali";="" mso-bidi-language:bn"="">কবিতার চিন্তা ও চেতনা</span></b><b><span style="font-size:12.0pt;line-height:115%;font-family:" siyam="" rupali";mso-bidi-language:="" bn-bd"=""><o:p></o:p></span></b></p>
কবির চিন্তা ও চেতনার গভীরতা কবিতার রসদ। মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। চিন্তার স্বাভাবিক প্রবণতা কবিকে কাব্য শরীর দাঁড় করাতে সাহায্য করে। চেতনা চিন্তাকে পরিশীলিত করে। সম্যক জ্ঞান কবিতায় আনে সুনির্দিষ্ট বার্তা। এ বার্তা প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তা নয়। যেহেতু কবিতার ভাষা মনের ভাষা, এর বার্তাও একান্ত মনোগত। এ বার্তা মানুষের মনের উৎকৃষ্ট অনুভূতির বার্তা। উদ্দেশ্যহীন মনোভাষা আবেগতাড়িত কবিতার জন্ম দেয়। মনের চিন্তাগুলো ভাষা হবার আগে চেতনায় পরিশুদ্ধ হলে কবিতা হয়। অন্যথায় মনের ভাষা ও মুখের ভাষা এক হয়ে যায়। অবশ্য মুখের ভাষা মস্তিষ্ক ও মনের চিন্তা প্রসূত। তাহলে মনের ভাষা ও মুখের ভাষায় পার্থক্য কই? পার্থক্য আছে। আছে বলেই মাঝে মাঝে মনের কথা ঠিক প্রকাশ করে উঠতে পারি না। আমরা নির্বাক হই, ভাষাহীন হই। তাই কবিতা মনের ভাষা। এখানেই কবিতা ও কথাসাহিত্যে পার্থক্য। কবিতা যদি মুখের ভাষা হয়ে যায় তা শিল্পমূল্য হারায়। কবির আবেগ কবিকে সমৃদ্ধ করে যেমন ডুবায়ও তেমন। আবেগের পরিশীলন না হলে কবিতা উর্ত্তীন্ন হয় না। আবেগ বর্ষার জমাট বাঁধা কালো মেঘের মতো। তার একটাই ফল তুমুল ঝরে যাওয়া, চরাচর ভাসানো। কিন্তু বৈশাখের মেঘ অনেক রহস্যজনক। এখন কালো হয়ে এলো আবার এখন ফর্সা হয়ে আসছে। এখন ঢেকে দিল নীল আকাশ, আবার সমহিমায় হাজির। এর মধ্যে একটা ধাঁধা আছে। এটাই কবিতা। তাই কাঁচা আবেগ কবিতাকে বর্ষার মেঘের মতো ভারী করে তোলে, যার ফল সুনিশ্চিত। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী। চিন্তায় আবেগ থাকে, তাই চেতনার দরকার হয়। কবির এমন কোন দায় নেই কবিতায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় বোঝাতে হবে। বোঝাতে গেলেই  কবি কাব্য মঞ্চে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কবির চিন্তা ও চেতনার সমন্বয়ে কবিতা হয়। বোঝার দায়িত্ব পাঠকের। না বুঝলেও তেমন ক্ষতি নেই কারণ আগেই বলেছি কবিতার ভাষা মনের ভাষা। তাই মনের ভাষা সবসময় বুঝতে হবে এমন কথা নেই। আমরা ক`জন নিজের মনকে বুঝি? আবার অন্যের মন! তবে অনুভূতির একটা মজা আছে। অনুভূতির মজা মুখে বলে প্রকাশ যোগ্য হয়ে ওঠে কম। অনুভূতির কথা অনুভবের ব্যাপার। এই অনুভবের জন্য চাই স্থির মন। অস্থিরতা কবি ও কবিতা দুটোকে নষ্ট করে। ঠিক তেমনে পাঠকের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই একই কবিতা পাঠকভেদে মূল্যায়নের ভিন্নতা দেখা যায়। পাঠকের মানসিক উচ্চতা কাব্যপাঠে সাহায্য করে। মানসিক উচ্চতা একটি নির্দিষ্ট  পর্যায়ে না গেলে কবিতা দুর্বোধ্যই থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই কাব্য পাঠে যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। শিল্প আজীবন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকেই আনন্দ দিয়েছে এবং দিবে। সাহিত্যের উৎকৃষ্ট শিল্প হলো কবিতা। পাঠকের চিন্তার জগত তার চেতনার চেয়ে বেশি নয় কিন্তু কবির চিন্তার জগত তাঁর চেতনার চেয়ে বেশি, এটা কবির স্বভাবগত। এজন্যই একজন কবি কবি হয়ে ওঠে। চিন্তা মানুষের স্বভাবগত বিধায় তা সাধারণত দৃশ্যগোচর বস্তু দর্শনে সৃষ্টি হয়। তার পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটো দিকই আছে। তবে চেতনার পজেটিভ ছাড়া নেগেটিভ কোন দিক আছে বলে মনে হয় না। চিন্তার জন্ম চোখ থেকে আর চেতনার জন্ম মন থেকে। এটা বলা যায় বহির্দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টির সমন্বয় হলে একজন মানুষ ভালো মানুষ হয় তার কাজে ও কর্মে। কবি মাত্রই ভালো মানুষ কারণ সে কবিতা লেখে। অবশ্য সাধু কবিদের ফাঁকে আজকাল অসাধু কবিও দেখা যায়। সাধু কবি তার চারপাশের পরিবেশের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার মধ্যে কবি মুক্তি খুঁজে পান। সেই মুক্তি বিন্দুমাত্র স্বেচ্ছাচারিতা নয়, কবির অবাধ বিচরণ। এ বিচরণ কবির সমগ্র সত্ত্বায় গেঁথে আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মাঝে। অসাধূ কবি আসলে কবি নয় অসাধু। তারা আসলে ধ্যান ভ্রষ্ট বা সাধনভ্রষ্ট সাধু। তারা সাধুর ভান ধরে আছে। তাই মানুষ মাত্রই কবি নয় আর কবি মাত্রই সাধু কবি নয়।
কবিতার নির্দিষ্ট কাঠামো আছে, এ যেমন সত্যি, সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েও কবিতার ক্যানভাস রঙিন করে তোলা যায় শব্দ ও ভাবের সুষম সমন্বয়ে। শব্দের শক্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া একজন কবির বেশ প্রয়োজন। কবিতার বড়ো পরিসর গ্রহণে খুব অনীহা। তাই ছোট ক্যানভাসে কবিকে ফোটাতে হয় যতনের সাথে। যাকে কবিতা হতে হয়। শব্দ যুগপৎ দৃশ্য ও ভাবের জন্ম দেয়। শব্দের মধ্যে দৃশ্য খুব সহজে ধরা দিলেও ভাবের ক্ষেত্রে তেমনটি না। একটি শব্দ পুরো একটি ভাবকে ধারণ করতে পারে না। শব্দের সাথে শব্দের বন্ধুত্ব না হলে ভাব মাঠে মারা যায়। কবি পাঠককে কবিতার ভেতরে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়। তাই কবিতায় কবির ভাব সুপষ্ট করতে হলে শব্দের গাথুঁনি হতে হয় যুৎসই। শব্দের পরশে শব্দের অর্থগত পরিবর্তন ঘটে। যা তার শাব্দিক অর্থকে ছাড়িয়ে যায়। উপহার দেয় নতুন কিছূ। এখানেই কবির সার্থকতা। কবির অন্তর্জগতে প্রতিটি শব্দ জোনাকি হয়ে জ্বলে যা বহির্জগতের সাথে সঙ্গতি সুসংহত করে তোলে। মাঝে মাঝে শব্দে শব্দে গড়ে ওঠে ধাঁধা। কবিতার ভাবে লাগে বহুরৈখিকতার পরশ। কবিতার ভাবের বিভিন্নতা কবিতাকে রহস্যময় করে তোলে। কবিতার এ রহস্য চিরন্তন। স্বভাবগতভাবে কবি এ রহস্যের খেলা রপ্ত করেন। কবি খুব সহজ কথায় অনেক মূল্যবান ভাব প্রকাশ করতে পারে। মূল্যবান মানে সৌন্দর্যের মূল্য। যা একান্তই মনোগত ব্যাপার, উপলব্ধি করতে পারলে ভালো লাগা কাজ করে। ভালো না লাগলে কবিতা ব্যর্থ হয় সাথে কবিও। শব্দের সুষম সমন্বয় কবিতাকে ফুটিয়ে তোলে ভোরের সূর্যমুখীর মতো আবার শব্দের বাহুল্য বা অসমন্বয় কবিতাকে ডোবায়। অপ্রয়োজনীয় শব্দ কবিতাকে মেদবহুল করে, কবির আবেগ কবিকে এই ভুল করিয়ে নেয়। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী।
কলম খাতার কাছে আসলেই কবিতা হয় না, হয় কথা। শুধু কবির কলম ও খাতার মিলনে কবিতার জন্ম হয়। কবি মানুষের অভিন্ন কিন্তু চিন্তা ও তার রূপায়নে ভিন্ন। দৃশ্যমান সবকিছু কবি অন্য দশজনের মতো দেখে এবং বোঝে কিন্তু একজন কবি তা কালিতে চমক দিতে পারে বলে সে কবি। কবির মানসিক সত্তা ও সামাজিক সত্তার মিল অমিলের কারণে কবিতা আসে। কবিতা হয়ে যাওয়ার বিষয়। মূলত কবিতা শব্দ ও ভাবের অনুপম কলা। সেই কবিতার সাথে সামান্যতম কৌশল কবিতাকে দিতে পারে অন্য মাত্রা। তবে কবিতা কি কৌশল? উত্তরঃ না। তবে কবিতায় কিয়দাংশ কৌশল প্রয়োজন পড়ে। কবির দৃশ্যগত বা চিন্তাগত বা দর্শনগত পীড়ন সবসময় কাজ করে। এসবের সমন্বয়ে একটি ভাব তৈরি হয় যা শব্দের ডানায় চড়ে ক্রমাগত কবিতার আকাশে উড়ে যেতে চায়। জন্ম হয় কবিতার। এ পুরো প্রক্রিয়ায় আবেগের সংযোগ বা বর্জনের, শব্দের দ্বন্দের বা বন্ধুত্বের, ভাবের সৌন্দর্যের বা ব্যর্থতার কৌশলে আবর্তিত হয়। কাব্য উদ্দীপনার পরের ব্যাপারটি কৌশল। কাব্য কৌশল। এ জন্য কবিতা কল্পনামূলক শব্দ গ্রহণ করে। যে শব্দে রয়েছে যুগপৎ ভাবের রহস্য ও সৌন্দর্যের ঝিলিক।
ছন্দ শব্দকে সুগঠিত করে কবিতাকে দেয় একটি ফর্ম। কবির মনে একধরনের সুর কাজ করে। এ গানের সুরের মতো নয় যেন ঠিক। কবিতার সুর। কবিতায় এ সুর ধ্বনিত হয় শব্দে শব্দে। এ সুরই কবিতার ছন্দ। একজন কবি মেপে মেপে নয়, প্রকৃতিগতভাবেই এটা রপ্ত করেন। যদি অন্তরে সুর খেলা করে, কবিতায় ছন্দ আসবেই। কবিতায় থাকবে চিত্রকল্প বা কল্পচিত্র। শব্দের সহজ সমন্বয়ে যা গড়ে ওঠে। এ চিত্র একান্তই কবির আশেপাশে ছড়িয়ে  আছে। কবিতায় তা ধরার জন্য চাই সহজিয়া মন ও মনন। খুব সাধারণ চিত্র কল্পনায় ফুটিয়ে তোলা যায় অসাধারণ করে। এ ক্ষেত্রেও কবিকে সেই চিত্রকে ফোটানোর জন্য যুৎসই শব্দের সমন্বয় জরুরী হয়ে ওঠে। কবি তা পারে। কবির অদ্ভুত এ ক্ষমতাটি রয়েছে। না বলা কথা সে বলে দেয়, না বোঝা কথা সে বুঝিয়ে দেয়।
শব্দমেদ যেমন কবিতাকে কাব্যরসহীন কওে ঠিক তেমনি ভাবের বিচ্ছিন্নতার মাঝে কবি শৃঙ্খলা তৈরির মুন্সিয়ানা দেখাতে পারলে কবিতা সার্থকও হয়ে ওঠতে পারে। তবে তা কবির কাব্যশক্তিতে নিহিত। কাব্যশাসন কবিতাকে নিরোগ করে। কবিতাকে বাঁচায় বিচ্ছিন্নতার বলি হতে। কবির কাছে শব্দ ফুলের মতো। যার আছে সৌন্দর্য ও কোমলতা। কবির সুন্দর চেতনা জরুরী। কবিতা শিল্পটাই মূলত সুন্দরের শিল্প। এ শিল্প কবির ভাষাবোধকে সমৃদ্ধ করে।
কবিতে সময় সচেতন হতে হয়। কবিতায় সময়কে ধারণ করতে না পারলে কবি ব্যর্থ। এই ধারণের ব্যাপারটি হতে পারে কবিতার বিষয়, অঙ্গিক ভঙ্গি এসবের সমকালিন প্রবণতাকে ধারণ। কবির একটি দেশ থাকে। যে দেশের আলো বাতাসে সে বেড়ে ওঠে। যার মাটির উপর হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে শিখেছে। আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, বর্ণিল সংস্কৃতি। একজন কবি এর সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, খোঁজেন সংগতি আর অসংগতি। কবিতা এ সবের প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে সুপ্রাচীন।`চর্যাপদ` হতে বাংলা কবিতার যাত্রা। চর্যাপদের সময়  হতে এ  পর্যন্ত রাশি রাশি কবিতা রচিত হয়েছে শত শত কবির হাতে। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনাকে ধরতে হলে কবিকে সাঁতার দিতে হবে এ কাব্য সমুদ্রে। বুঝে নিতে হবে কবিতার বাঁক ও প্রবণতা। প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুঁজি করে সমকালিনতার উপর ভর করেই কবিতাকে অনন্তের মুখ দেখাতে হয়। শেকড়জাত বিষয়গুলো কবিতায় নিয়ে আসার আলাদা কোন কৌশল নেই। কবিকে এ ব্যাপারে কোন অত্যধিক প্রচেষ্টারও প্রয়োজন পড়ে না। এ বিষয়গুলো আপনাআপনি আসে কারণ একজন  কবি তাঁর শেকড়ের উপর ভর করেই বেড়ে ওঠে। শেকড়জাত চিন্তনে, ভাষ্যে এসবের চিত্র ফোটে। কবির কাজ শুধু কবিতা লেখা নয়। আর দশজনের মতো তাকেও যাপন করতে হয় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার জীবন। যাপনের আনন্দ বেদনা কবিতায় আসে। এসবের মাঝে আমাদের ঐতিহ্য চেতনা সচেতনভাবে ঢোকাতে হয় কবিকে। তাই আমাদের শেকড়জাত বিষয়গুলো নিয়ে পঠন-পাঠন জরুরী। তাই কবিকে পড়তে হয় বেশি লেখার চেয়ে।


প্রত্নচর্চার পাঠশালা

প্রত্নচর্চার পাঠশালা / শেখর দেব   

<span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px; font-family: Vrinda;">প্রত্নচর্চার</span><span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px;"> </span><span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px; font-family: Vrinda;">পাঠশালা / </span><span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px; font-family: Vrinda;">শেখর</span><span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px;"> </span><span style="font-size: 12pt; line-height: 18.399999618530273px; font-family: Vrinda;">দেব</span>



কাব্যগ্রন্থঃ প্রত্নচর্চার পাঠশালা
লেখকের নামঃ শেখর দেব
প্রকাশনীঃ পাঠসূত্র প্রকাশন,
প্রচ্ছদঃ মোবাশ্বির আলম মজুমদার,

নিপাট ভদ্রলোক চট্টগ্রামের কবি শেখর দেবের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হল এবারের বই মেলায়, শিবঠাকুর শ্মশানে-শ্মশানে তুমি কজন পার্বতীর বুকে দিয়েছ আগুন` এমন কিছু অনায়াসে লিখে ফেলতে পারেন। তাঁর  সাথে কিছু কথোপকথনঃ

বিভুঁইঃ কবিতা কেন লেখেন?

শেখর দেবঃ কবিতা লিখি মনের পীড়ন থেকে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অতীত বর্তমান ভবিষ্যতকে শিল্পিত অবয়ব দেয়ার চেষ্টা থেকে লিখি এমনও যে, কবিতার কাছে আশ্রিত হয়ে নিজেকে নির্ভার মনে হয় তাই
 
বিভুঁইঃ আপনিতো পেশায় ব্যাঙ্কার তাইনা?

শেখর দেবঃ পেট চালানোর জন্য একটি পেশা রাখতে হয় যে পেশায় আছি সেটা আমার কাছে কবিতা লেখার বিরুদ্ধ মনে হয়,কারণ অখণ্ড অবসর না পেলে পড়াশুনা কবিতা কিছুই হয় না তাই এটা পরিবর্তন হতে পারে তাছাড়া আমি এটা উল্লেখ করতে চাই না
 
বিভুঁইঃ আপনার লেখা কোন কবিতা আপনাকে কবি হিসেবে প্রথম খ্যাতি এনে দিয়েছিল? প্রেক্ষিতটাও একটু

শেখর দেবঃ এভাবে specific কোন কবিতার কথা বলা কঠিন, তবে লিখতে লিখতে পরিচিত হয়ে ওঠে একজন কবি খ্যাতি পেয়েছি কিনা জানি না তবে কবিতা লিখি বলে কিছু কবিরা চেনে তবে আমার `ত্রিভুজ`, `লাখবাতি` `পিতা পৃথিবী` কবিতাগুলো অনেকবার ছাপানো হয়েছে এমন কি একই পত্রিকায় বার করেও,

বিভুঁইঃ ছোট বেলায় কখনো ভেবেছিলেন আপনি কবিতা লিখবেন

শেখর দেবঃ ছোট বেলায় স্কুলে পড়া অবস্তায় কবিতা নয় ছড়া লিখতে চেষ্টা করেছিলাম কলাপাতার উপর বৃষ্টির ফোটা পড়তে দেখে, যে দৃশ্যটি আমি জানালায় বসে দেখেছি বর্ষার দিনে জানালা ছিল আমার প্রিয় বস্তু, এর ভেতর দিয়ে প্রকৃতিকে দেখেছি নিবিড়ভাবে 
,
বিভুঁইঃ ঠিক কখন ভাবলেন যে কবিতা লেখাটাকে সিরিয়াসলি নেয়া যায়?

শেখর দেবঃ এইচএসসি পড়া অবস্তায় যখন জীবনানন্দকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম এবং যখন পত্রিকায় কবিতা ছাপানো শুরু করল তখন থেকেই কবিতাকে সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম

বিভুঁইঃ আপনি কবিদের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

শেখর দেবঃ সামাজিক দায়বদ্ধতা বলতে আমারা কি বুঝি সেটা নিয়ে ভাবার দরকার আছে, সমাজের উন্নয়নে নিজের কাজকে সম্পৃক্ত করা? সমাজের নানা সংস্কার আর কু সংস্কারকে ভেঙে প্রত্যাশার মতো গড়ে তোলা? নাকি অন্য কিছু এসব প্রশ্নের উত্তর আমার কবিতা দেবে তবে একজন কবিকে অবশ্যই তার মা মাটির কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয় কবি মানে সমাজ বিচ্ছিন্ন বস্তু নয় একজন কবিকে তার নৈতিকতার জায়গায় অটল থাকতে হয় আমি কবিকে ধ্যানি সাধুর সাথে তুলনা করি যে কিনা সমাজের নানা রহস্যের সারকে তুলে আনবে সুন্দর করে মানুষকে সমাজ-সংলগ্ন বিভিন্ন বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে সমাজে প্রবাহিত বিভিন্ন চিন্তার পরিশীলন ঘটিয়ে নতুন সত্যের উন্মোচন ঘটাবে

প্রত্নচর্চার পাঠশালা কাব্যগ্রন্থ থেকে কবি শেখর দেব-এর তিনটি কবিতাঃ

লাখবাতি

কাঠের সিন্দুকে জ্বলে লাখবাতি অন্নপূর্ণার হাসিতে কোকিল ডাকে ধানের গোলায় পরিপাটি ধুতির ভাঁজ; জ্বলে হাসি সুখের বাতি রঙিন আঁচলে দেখা দীঘির দীঘল ঘাট সব জানে
শিমুলতলায় ঝরাপাতা করবন্দি করে পেয়েছি সুদীর্ঘ আয়ু গন্ধরাজের বাগানে প্রজাপতি-চোখে খুঁজেছি তৃষ্ণাবিনাশী নদী অবশেষে সেই নদীতেই হারিয়েছি সব
শুভ্র বসনা দিদির সন্তানেরা নিয়ম ভেঙে গড়েছে দিনরাত আঁধার সিন্দুকে জমা আছে দাদার শোক, দিদির দীর্ঘশ্বাস

মা-মাটির দলিল

চারদিক আঁধার ঝিমঝিম, কেড়ে নেয় আলোর রঙ মাটির মর্ত্যলোকে চোখ মেলে পেয়েছি মা-মাটির দলিল; টেনেছে সুনিবিড় পৈত্রিক ভিটে, হেসে ওঠে কান্নার রোল  গোশালার ধবল ধেনু হাম্বা শব্দে জানিয়েছে অভ্যর্থনা উঠোনের কোলে শিমুল ঝরেছে নিরবে পণ্ডিত মহাশয় ঠিকুজি এঁকে মীন জাতকের বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ভালোবাসার দিল বিবরণ কোষ্ঠীর অবয়বে হাতে দিল বইয়ের স্বর্গ, পকেটে কলম পৌষের কুয়াশা ছোঁয়নি তেমন
বুদ্ধির শাণিত আলো কোমল শেকলে বাঁধা হলো মাটি, প্রকৃতি, গোশালার গরু পুকুরের মাছ শিমুল তলায় ঠাকুরদিদি ফোটিয়েছে বেঙমা-বেঙমীর সংসার প্রবল শীতে গো-বাছুরের গায়ে জড়িয়েছি র্শাট; গলায় গলা জড়িয়ে গিয়েছি মাঠে ছঁই এর গিলে অপলক তাকিয়েছি টুনটুনির লেজ নাড়া পুকুরে মাছের খেলা শেষে ছুটেছি ছড়ার জমে থাকা জলে দুরন্ত শৈশবে
সুবাসিত ফুলের বাগান উজাড় হলে হারিয়েছি মাটি মায়ের অশ্রসিক্ত চোখে দেখিনা মাটির গল্প

শ্মশানসাধু

শ্মশান রাতে চণ্ডালের হাতে নিথর শরীর সঁপে শিশির সিক্ত ঘাসে চলেছে আড্ডা শিবঠাকুর চলেছে মাতাল মমতায় কৃষ্ণের বাঁশিতে ডাকে রাধা রাধা চলো অশ্বত্থকুন্জে
পতিত পবিত্রতায় উদ্বাস্তু সাধু বানিয়েছে মনগড়া পৃথিবী দীক্ষা নয়, যাপনের শিক্ষায় সে মাতাল আধখানা চাঁদ জোছনার ধবধবে শাড়ি বিছিয়ে দিলে সাধু প্রশ্নের প্রত্যাশায় বসে থাকে আর হাতে হাতে তুলে দেয় তালুতে ঘষা আনন্দ ধোঁয়া
যাপনের যবনিকা টানার আগে লাশ-পোড়া আগুন গায়ে মেখে চণ্ডাল সাধুকে বলে: শিবঠাকুর শ্মশানে-শ্মশানে তুমি কজন পার্বতীর বুকে দিয়েছ আগুন সাধু মৃদু হেসে পাশ ফিরে শোয় পরম মমতায়


অনুলিখন ও ফিচার ভাবনা ঃ দেবাশীষ (অন্যদিন)