বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৬

শেখর দেবের কবিতা

শেখর দেবের কবিতা2015-12-17T10:52:44+00:00
কখনো পাইনি কোন রোমাঞ্চকর কান্নার রাত
ভাসায় তবু দীর্ঘ কুহকের অনুভূতি
সেসব অতৃপ্তির আঁধারে হাসে প্রগাঢ় প্রমাদ
চুমুর বিনিময়ে দিয়েছি মনের দামে কেনা সমূহ সঞ্চয়!
ব্যক্তিগত পুকুর অথবা পাখির কথা

চড়ুইভাতি পুকুরে ভাসে পদ্মের দল। পুকুরে বাড়ন্ত মীনের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম আমাদের অপার আমোদ। কী সুন্দর দুলেছে
পৃথিবী। চারপাশে শৈশবের বন্ধুরা যে যার মতো গড়েছে সংসার। অথচ আমার কোন ব্যক্তিগত পুকুর ছিল না। সেই থেকে চড়ু
ইভাতির দিন এলে পুকুর পাড়ে মালিকানার আশায় কেটেছে সময়। পাশে ঘনকালো ছায়ারা খেলেছে বাহারি মুগ্ধতায়।
মনে হলো কী হবে পুকুর দিয়ে বরং ব্যক্তিগত কোন পাখি দরকার। যার ডানায় বাতাসের সুগন্ধ আর ঠোঁটে বিবিধ ফলের সুবাস।
একদিন পাখির আধখাওয়া ফলে কামড় দিয়ে জেনেছি পাখিদের কোন মালিকানা হয় না। এসব ইচ্ছের মাঝে একদিন সংসারে হানা
দিল জন্মগোত্রহীন শারমেয় দল। পুকুরের মাছ আর আকাশের পাখির কথা ভুলে সারারাত ঘুরেছি বনে বাদাড়ে। জঠরের অন্ধকার
ভেদ করে যেদিন আলোর মুখ দেখলাম ততোদিনে কেটেছে বীভৎস নয় মাস।

পাখির ডানায় পোড়া মানচিত্র

আমাকে বেদনাহত পাখির কাছে নিয়ে চলো
যার ডানায় ঝুলে আছে পোড়া মানচিত্র
আর রাক্ষুসীর বীভৎসা বাসনা।
রক্তাক্ত বুলেট থেকে কুড়ানো স্বপ্নগুলো
চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসে।
পেট্রোল বোমার আগুন-থাবায় পুড়ে
মানুষের বিবেক আর ট্রাক ড্রাইবার শহীদুল
অথচ কারো তরুণ তর্জনী দোলে না!
নতুন বইয়ের ঘ্রাণে বিমুগ্ধ কিশোরীকে
কী কৈফিয়ত দেবো?
ড্রাগন নাগিনীর মুখের আগুনে
জ্বলে চুলের ফিতা আর চঞ্চল চিবুক
পাঠশালার স্নিগ্ধ সময় যার কাটে
হাসপাতালের ব্যান্ডেজেÑ কালের কাতরাতায়।
ফাগুনের ফুল কতোটা সুবাস ছড়ালো
কতোটা পোড়ার ঘ্রাণ আকাশে বাতাসে?
রাক্ষুসীর বাতাস লাগা বিমর্ষ বাংলায়
ভেঙে যায় নিবিড় সুখের ঘুম।
চোখে ডিজিটাল স্বপ্নের ভেতর
দেখি দগ্ধ দামাল আর পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন।
সংবিধান কি বোঝে না মায়ের বেদনা?
আত্মঘাতী বাঙালির স্বপ্নের ভেতর
পিঠে আগুন নিয়ে কতদূর উড়ে যাবে পাখি!

কৃষ্ণপক্ষ

তোমার ইশারায় কাঁপে ঋতুজ মনন। চারপাশে কৃষ্ণপক্ষের ধাঁধা। আমাকে দেখেই চঞ্চল চড়ুই স্বভাবে লাফিয়ে উঠতো হৃদয়ের
বহুমুখী মেধারা। এসব অপরিমেয় মেধার ভেতর ক্রমশ হারিয়ে সংযত শান্ত মনে কী যেন বলতে গিয়ে চুপসে গিয়েছি লজ্জাবতীর
আদলে। অথচ আমার ভেতর আছে নিশ্বাসের নিষিদ্ধ ঝংকার আর চলিষ্ণু ঝরনার খরবেগ। এসব মন ও মেধার পাঠ হারিয়ে গেছে
নাপোড়ার ছড়ায়।
আজ যারা নিজের ওজনের চেয়ে ভারী স্কুল ব্যাগ নিয়ে হাঁটে আর লজ্জানত চোখে চারপাশে তাকায়, তাদের কাছে তুলে দিয়েছি
সম্ভাবনার প্রতিটি ফুল। কৃষ্ণপক্ষ পেরিয়ে এসে অন্তর্গত বিস্ময়ে দেখি তোমার সিঁথির বিদ্যুৎ রেখায় রক্তাক্ত একাত্তর। সমগ্র জীবন
বাজি রেখে ভেবেছি যে পথ সত্য সে পথ আমার। অথচ সে পথেই কালো পিচাশের আঁধার। কোন অজানা কারণে অকালপক্ক ভাঁড়ের
হাতে দিয়েছি মননের জামানত!

তিলোত্তমা জাদু

আকাশ জুড়ে কদম ঘ্রাণে বৃষ্টি অনাবিল
নিবিড় প্রাণে মনরে টানে মিষ্টি জাদুর তিল।
তিলেক সময় চোখ ফেরে না নিবিড় অনামিষা
বৃষ্টি বুঝি তুমুল মাতাল মিটিয়ে দেবে তৃষা।
চুলের নেশায় আঁধার নামে গোপন চোখে মুখে
আকাশ নীলে লীন হয়ে যাই মদির বায়ুর সুখে।
তিল দেখেছি চিলের ঢঙে দেহের মেঘে ঘুরে
ঠা-া বায়ুর স্রোত নেমেছে বৃষ্টি অচিনপুরে?
চোখের পানে চোখ রেখেছি বুঝি মনের ভাষা
মেঘ কাটে না নীল দেখি না তবে কি দূর আশা?
ভাষার জাদু আশার মধু নিয়ে বৃষ্টি নামে
ছলছলিয়ে জল গড়িয়ে যায় যে ডানে বামে।
ওগো জাদু এমন দিনে কেমন আছো একটু বল না
‘এসব তেমন বুঝি না বাবু জানি না জানি না!’
চোখের তারায় ঠোঁটের মায়ায় গরম বাতাস মৃদু
তিলের ম্যাজিক মন্ত্রে তুমি তিলোত্তমা জাদু।

সুগন্ধী বাগান
http://dhakareview.org/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE/ 
কখনো পাইনি কোন রোমাঞ্চকর কান্নার রাত
ভাসায় তবু দীর্ঘ কুহকের অনুভূতি
সেসব অতৃপ্তির আঁধারে হাসে প্রগাঢ় প্রমাদ
চুমুর বিনিময়ে দিয়েছি মনের দামে কেনা সমূহ সঞ্চয়!
হৃদয়ঘন কালে চোখ বন্ধ হয়ে এলে
চারপাশের আলোকে চুষে করেছি রাত
অতঃপর আঁধারের আরাধ্য আরতি!
উন্মোচিত শরীরে ফুটে সুগন্ধী ফুল
ক্রমশ রমণীয় ফুলের বাগানে হয়েছি বিভোর।
পৃথিবীতে পরম কোন অধ্যায় নেই
পরমার চোখে বেড়েছে দিন
যার মতো কোন সুগন্ধী বাগান দেখিনি আর।
প্রকাশিত প্রথম কাব্য ‘প্রত্নচর্চার পাঠশালা’। জড়িত আছেন ছোট কাগজ ‘শাঁখ’ সম্পাদনার কাজে। শেখর দেব চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার শেখেরখীল গ্রামে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশুদ্ধ গণিতে স্নাতকোত্তর শেষে একটি কমার্শিয়াল ব্যাংকে কর্মরত ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন