বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

নূপুর অথবা বৃষ্টি

নূপুর অথবা বৃষ্টি

শেখর দেব


বৃষ্টির কাছে তোমার নূপুর জমা রেখে বলেছিলামঃ
তুমি কি নূপুরের মতো মোহিত করে
শোনাতে পারো বৃষ্টিকে?
প্রিয়ার পায়ের অবিকল একটা আকাশ দেখলে ভাবি
এখন ঠিক আলতার মতো রংধনু উঁকি দেবে
ঝন ঝন নেমে আসবে বৃষ্টি
নূপুর যেভাবে ঘোরের মদিরা হাতে দিয়ে
ঝাপসা করে তোলে চোখ
অন্দরজুড়ে ঝুন ঝুন তুমি হেঁটে গেলে
বাহিরে বৃষ্টি নামার অপেক্ষায়....
আকাশকে হতে বলি ঝাপসা তোমার হৃদয় অবিকল
আকাশ তার ঘোমটা খুলে
ঢেলে দেয় ঝুম ঝুম মদিরা
উর্বর হয়ে উঠে সমূহ চঞ্চল অঞ্চল
আর আমি তোমার পায়ের আঙ্গুলে ঠোঁট রেখে
পান করি সুরের অমৃত
নিমেষে ডানা মেলে প্রকটিত হয়ে
ঘুরিয়ে আনো সুনিবিড় এক পৃথিবী হতে
যেখানে চোখের ইশারায় নামে বৃষ্টি
আলতার রঙ্গে রঙিন হয় আকাশ
নূপুরের ছন্দের অবিকল বৃষ্টিতে ভিজে যেতে যেতে
নূপুর ফিরেয়ে দিয়ে বৃষ্টি বলেছিলঃ
রিনিঝিনি রিনিঝিনি শব্দে আমি ঝরে যাবো
যদি তোমার বুকের নদী করে রাখো ছলছল।

মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১২

কনথ্রাডিকশান

কনথ্রাডিকশান

শেখর দেব

আমি থ্রি-পিসমোড়ানো কবিতাটির পতি;
কলেবরের শব্দ-বিন্যাসে ওড়নার ভাঁজে
গোপন ঘোরে নাচায় পঙক্তিতে পঙক্তিতে।

দিন রাতের কোলে শির লুকালে
জলজ জানালা বেয়ে ঢুকে পড়ে বসন্ত ছন্দে আনন্দে
ফালি ঠোঁটের উন্মাদ-উন্মীলনে কবিতার উদ্বোধন
সেরে পিঠের শব্দসন্ধি খুলে উন্মুক্ত জঘনে নাচে
পেলব শব্দযুগল। করতলে কাঁপে সমস্ত অবয়ব।

আমি কবিতাটির জনয়িতা
থ্রি-পিস মোড়ানো কবিতাটির পিতা


আমি থ্রি-পিস মোড়ানো কবিতাটির পিতা
 আমি থ্রি-পিসমোড়ানো কবিতাটির পতি।

বিষ

বিষ

শেখর দেব

পূর্ণিমায় মাঝে মাঝে জেগে ওঠে বিষ
মদির বিষ!

আষাঢ়ি চাঁদের মদিরা গিলে
আবেশ ক্ষেত্রের বাইরে নেচে যায় গনেশ
মেঘ কেটে গেলে অর্বাচীন ছাদে
তোমার যুগল চাঁদ ভাসে স্বপ্ন-মুদ্রায়
বিষ নামে না, সিদ্ধি মেলে না
হে বিষহরি!
বিষতো মরে না
দু'ক্ষেত্রে
             গড়ে
                      দু'ভুবন
আলাদা চাঁদের প্রহসন
মেঘ ঢেকে যাক হেসে হেসে
বিষ নেমে যাক আষাঢ়ি ঢলের বেগে।

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

প্রেমিকা কিম্বা বীরাঙ্গনার গল্প

প্রেমিকা কিম্বা বীরাঙ্গনার গল্প

শেখর দেব

আকাশের কোন চাঁদ আমি পাইনি হাতে
কররেখা জুড়ে শুধু তোমার দুরন্তপনার ছবি
পুরনো একটা কবিতা লিখবো বলে
কপালে চুমু-চিহ্ন এঁকে বলেছিলামঃ
'পৃথিবীতে একটা দেশ আছে
পরস্পরের শান্তির, শোকের।'

ফয়'স লেকের পাহাড়ে বৃক্ষের ছায়া মেপে
ভালোবাসার গল্প শুনিয়েছে ক্লান্ত শালিক
তোমার শালিক দেখলে শকুনের কথা মনে পড়ে।

শকুন-রাজত্বের গল্প শুনে শুনে
আমাদের মাজে এসে দাঁড়ায় শকুন
জানি, বিরহ তোমার ভালো লাগে না।

সেদিন ভোরে সত্তোরের যুবক হয়ে
অস্ত্র রেখে কলম নিয়ে বসেছি খড়ের গাদায়
বোনের সবুজ শাড়ি আমার রক্তে
পতাকা হয়ে ঊড়লো আকাশে আর
বিরহী প্রেমিকা না হয়ে তুমি হলে সুমহান বীরাঙ্গনা।

শাটল ট্রেন

শাটল ট্রেন

শেখর দেব

হারনো সুর ভেসে আসে
বগির জানালায় পড়ে থাকা কোমল রোদে
বিলের পর বিল অতঃপর
গ্রামের পিঠ বেয়ে নামে নরোম বিকেল
দু'বেণীর কিশোরী কুড়ায় কিশোর রোদ
পশ্চিমের পাহাড় হাসে আবেশে।

ক্লান্তির চোখ বুজে এলে
পতেঙ্গার পাথর ও পাথারে নামে শীতল হওয়া
মোহন বাতাসে কুড়াই অব্যেক্ত প্রেমের ঝিনুক।

রেল লাইন ছুটে যায় দুরে-পাশাপাশি
শহরের কোলাহল ক্রমশ গিলে খায় গ্রাম
রোদ ফিকে হয়ে এলে
নেমে পড়ি ইটের ইমারতে
ফেলে আসি কিছু গ্রাম
                                   অজানা প্রেম
                                    গভীর স্বপ্ন।

ঠাকুরদিদির আঁচল

ঠাকুরদিদির আঁচল

শেখর দেব

দিদির আঁচলে বাঁধা ছিল অমোঘ আকাশ। বাল্যশিক্ষার পাঠে
বয়ে গেছে নদী। নদী ও আকাশঘেরা ছিল শৈশব-স্বপ্ন;
শিমুলতলায় ছিল বেঙ্গমা বেঙ্গমীর বিছানা; হাসি কান্নার ঘোর।

বয়সী শিমুলের ঝরে গেছে পাতা। শহুরে সময় নদীর নৌকায়
দিয়েছে হওয়া। আঁচলের আকাশ হাতে ধরিয়ে দিদি বলেছিলঃ
                               'ঘুড়ি ওড়াবি ভাই নিয়ন্ত্রিত নাটাই হাতে।'

মরাখাল ও সবুজ সমাচার

মরাখাল ও সবুজ সমাচার

শেখর দেব

সবুজ পাতায় এক ফালি রোদ নিরবে কাটায় বসন্ত-ভোর।
মেঠোপথ ধরে দৃশ্যের পর দৃশ্যে আলো ছায়ায় চলে সবুজ
সমাচার। চৌদ্দ-পুরুষের বিরহযাপনের স্মৃতি বুকে মরাখাল
শুয়ে রয় পথধারে। ঘোলাজলে সবুজ পাতা ঝরে না। শুষ্ক
পাতারা যৌবন হারালে ছুটে আসে নিথর জলে আর পাতারা
জানেনা আমিও বসন্তের যৌবন নিয়ে ছুটে আসি খালের খোঁজে।