বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৯

কৈশোরে যেমন কেটেছে বিজয় দিবস- শেখর দেব

ষোলই ডিসেম্বর। অগ্রাহায়নের শেষ, পৌষের শুরু এমন কোন এক দিন। ফসলের মাঠে পাকা ধানের ঘ্রাণ। কিছু কাটা হয়েছে, কিছুতে পাকার রঙ লাগছে। ভোরের পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশিরের রোদঝলমল খেলা। বাড়ির পাশেই স্কুল। বিজয়ের গান ভেসে আসছে স্কুল মাঠ হতে। চারদিকে বিজয়ের ঘ্রাণ। কী অদ্ভুত টানে গানের কথায় ও সুরে মগ্ণ হয়ে থাকা বাড়ির দাওয়ায়। রোদের উষ্ণ তাপে এ যেন নতুন আঁচ লাগায় মনে ওপ্রাণে। ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো খুলতে থাকে অপরিপক্ক মনের ঝাপসা ক্যানভাসে ।
আমাদের শৈশবে বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। আমাদের কৈশোর নব্বই দশকে গণতান্ত্রিক সময়ে। তখনো বুঝি না স্বৈরশাসন কী বা গণতন্ত্রই বা কী। হয়তো সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে মাত্র গণতন্ত্রের প্রাথমিক পাঠ নিয়েছি। তাও পরীক্ষায় পাশের জন্য কিছু মুখস্থ বুলি ছাড়া কিছুই নয়। স্কুলের এত্ত এত্ত বই আর পড়াশোনা শুধু পরীক্ষা পাসের জন্যই ভেবেছি পুরো স্কুল জীবনে। এখন এসে মনে হয় স্কুলের পাঠ যে শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য নয় এই সত্যটি উপলব্ধি করাতে আমাদের শিক্ষকরা ব্যর্থ ছিলেন।

দাওয়া হতে রোদ নেমে গেছে উঠোনে। শিমুল তুলো গাছের ফাঁকে রোদের রেখাগুলো উঠোন জুড়ে আলোর ফুলে সাজিয়ে দিয়েছে। রোদের আঁচের আশায় আমরাও বসার মাদুরসমেত নেমে যেতাম উঠোনে। ততক্ষণে স্কুল কম্পাউন্ড হতে একটি বজ্রকন্ঠ ভেসে আসতো। গা শিউরে উঠা সব কথা। সেই ভাষণ থেকে একটা শব্দ কানে লাগতো খুব। সংগ্রাম। মা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতো। সংগ্রামের কথা। স্বাধীনতার কথা। পাকিস্তান আমলের শাসন ও শোষনের কথা। পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কথা। আমরা ছিলাম পরাধীন। আজ আমরা পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্ত যে সংগ্রামের মাধ্যমে এটাই সেই সংগ্রাম। স্কুলে লাগানো মাইকে সেই সংগ্রামের আহবান ভেসে আসছে। যিনি আহবান করছেন তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর কণ্ঠ কিশোর শরীরে প্রবাহিত রক্তে কেমন ঢেউ খেলে যায়।
ঠাকুরদিদি মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতো দুচোখে টলমল জল নিয়ে। বলতো আমি মরে গেলে আমাকে পুড়িও না, কবরও দিও না। আমরা অবাক হতাম, বিস্মিত হয়ে জানতে চাইতাম, মরে গেলে তোমাকে কী করবে ঠাকুরদি? দিদি ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জবাব দিতেন, আমাকে বাড়ির সামনে বয়ে যাওয়া খালে ভাসিয়ে দিও। আমি ভেসে ভেসে তোদের ঠাকুরদার কাছে চলে যাবো। তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতো ঠাকুরদা কোথায় থাকেন। বাড়ির সামনে বয়ে যাওয়া খালটাই বা কোথায় গেছে। মাঝে মাঝে খালের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে খালের সমাপ্তি খুঁজতাম। ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম। শীতকালে খালটি শুকিয়ে যায়। এখানে সেখানে টুকটাক পানি জমে থাকতো। আমরা সেই পানি সেঁচে মাছ ধরতাম। ঠাকুরদিদিকে বলতাম তুমি শীতকালে মারা যেও না। শীতকালে তোমাকে ভাসানোর মত পানি খালে থাকবে না। কোন বর্ষায় তুমি মরে গেলে ভালো করে ভাসিয়ে দিতে পারবো। ভাসতে ভাসতে ঠাকুরদার কাছে চলে যেতে পারবে। আচ্ছা ঠাকুরদা কি কখনো ফিরবে না?  ঠাকুরদা খাল বেয়ে কোথায় চলে গেছে? সাগরে? সাগরে কেন গেছে?
এত এত প্রশ্নের ফাঁকে ঠাকুরদিদির চোখ দিয়ে আরো কিছু জল ঝরে যেত। ঠাকুরদার গল্প বলতো চোখ মুছতে মুছতে। এ গল্প ঠাকুরমার ঝুলি থেকে নেয়া রূপকথা নয় বরং ঠাকুরদার বাস্তব গল্প। যে গল্পে মিশে আছে রক্তের ¯্রােত ও আগুনের লেলিহান শিখা।
ঠাকুরদা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতেন। বিষয়টি রাজাকাররা যেদিন জেনে গেল সেদিন রাতে পুড়ে দেয়া হল বাড়ি। চোখের সামনেই ছারখার হয়ে যেতো দেখলো ঠাকুরদিদির গোছানো সংসার। সেই আগুনের মরণ থাবা হতে বাবাদের বাঁচিয়ে ঠাকুরদি পালিয়ে গেল বনে বাদাড়ে। সেদিন থেকে ঠাকুরদার খোঁজ পায় না দিদি। পরে একদিন শুনলো ঠাকুরদাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গেছে। আরেকদিন শুনলো ঠাকুরদাকে জবাই করে দিয়েছে রাজাকাররা।
ঠাকুরদিদি এসব বিশ্বাস করতে চায় না। একদিন ভোরে পূর্ব দিগন্তে রক্তাভ সূর্য উঠছিল। চারদিকে খবর ছড়িয়ে গেছে, বিজয় আসন্ন। ঠিক তখনই ঠাকুরদিদিকে বিশ্বাস করতে হলো ঠাকুরদা আর নেই।
ঠাকুরদার সাথে আরো দুজনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেদিন। সে দুজন লোকের সাথে দেখা হলো ঠাকুরদিদির। তারা বললেন, জীবন বাঁচানোর জন্য একবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ বললে কী হয়? সে বলবেই না। আমরা পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে ফিরে এসেছি রাজাকারদের হাত থেকে। আমাদের গাছের ডালে মাথা নিচের দিকে দিয়ে উপরে পা বেঁধে রেখেছিল। সবাইকে বাঁচার শেষ সুযোগ হিসেবে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বলেছিল। সে কি না বললো, ‘আমি মরে গেলেও পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলবো না। আমি স্বাধীন বাংলাদেশ হয়তো দেখবো না কিন্তু আমার নাতি পুতি একদিন ঠিকই দেখবে।’যখন তাকে জবাই করছিল তখনও সে বলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ।
ঠাকুরদার গলাকাটা লাশটি খালের পাড়ে জাল দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। ঠাকুরদিদি আর বাবারা অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছিল লাশটি। তখন আর লাশের সৎকার করার অবস্থায় ছিল না। সেই খালেই ভাসিয়ে দিতে হয়েছিল দেহাবশেষ । সাগরের কোন মাছ নিশ্চই ঠাকুরদাকে ছিঁড়ে-ছুঁড়ে খেয়েছে। ঠাকুরদার কলিজা খাওয়া মাছটির সাহস দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে এই দেশের জন্য নিজের প্রাণটি বিলিয়ে দিতে। এমন মহৎ মৃত্যু কজনের হয়?
মাইকে ভেসে আসা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ এর ভাষণ আমাকে উলটপালট করে দেয়। আমি স্কুলের দিকে ছুটে যেতে চাই। ততক্ষণে ঠাকুর দিদির দুচোখে শীতে শুকিয়ে যাওয়া খালের মতো জল প্রবাহিত হয়। আমি সেই জলে চেতনার মাছ ধরি। চোখের সামনে ভেসে উঠে ঠাকুরদার গলাকাটা খ-বিখ- লাশ ভাসছে সাগরে। আর দিদি মৃত লাশ ভাসিয়ে দিচ্ছি খালের জলে। খাল বেয়ে ঠাকুরিদি চলে যাচ্ছে ঠাকুরদার কাছে। দেখি ঠাকুরদা হাতছানি দিয়ে ডাকছে দিদিকে। আমাদের চোখে ঠাকুরদা হয়তো দেখছে স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশের জল হাওয়ায় আমরা যখন নিশ^াস নিই ঠাকুরদার বুকটাও ফুলে ওঠে।
আজ বিজয় দিবস। স্কুলে ক্লাস নেই। র‌্যালি হবে। বিজয় র‌্যালি। মাইকে গান বাজে, এক নদী রক্ত পেরিয়ে... ঠাকুরদিদিকে ভাসিয়ে দেয়া খালের জল লাল হয়ে যায়। আমি দেখি লাল রক্তের উপর ঠাকুরদি ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে দূরে। সেই লাল জল হঠাৎ করে সবুজ হয়ে যায়। দেখি সবুজ জলের উপর ভাসছে দিদি। সবুজ স্কুল ড্রেসে আমাদের র‌্যালির লম্বা লাইন জলের মত ঢেউ খেলে হাঁটে। আমাদের র‌্যালি স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বের হয়ে সড়কে চলে আসে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের গান গাই, বিজয়ের স্লোগান দিই। আমাদের র‌্যালি গমগম আওয়াজ নিয়ে ছুটে চলে, খালে যেন ঢল নেমেছে। সেই ঢলে আমিও চলতে থাকি। আমার শহীদ ঠাকুরদাকে মনে পড়ে, বাংলাদেশ নাম মুখে নিতে নিতে যার শেষ নিশ্বাস পড়েছিল এই মাটিতে। সেই মাটির দিকে তাকাই, বিজয়ের গান গাই।
র‌্যালি স্কুল কম্পাউন্ডে ফিরে আসে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন স্কুল শিক্ষকরা। বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে পেতাম পুরস্কার। গমগম স্কুল মাঠ। উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের কোলাহলে আমি কেমন উদাস হয়ে যেতাম। মুক্তিযুদ্ধের গানগুলো আমাকে আরো উদাস করে দিত। কখনোই আমার ঠাকুরদার এই আত্মত্যাগকে মন থেকে মুছতে পারতাম না। বিজয়ের আনন্দ উৎসব অন্যরকম বেদনায় মোড়া থাকতো।
বঙ্গবন্ধুর বজ্র কন্ঠ, ঠাকুরদার রক্ত আর ঠাকুরদিদির চোখের জল আমাকে বন্দি করে রাখে। দেশ ও স্বাধীনতা বিরোধী একটি শব্দও আজ সহ্য করতে পারি না। কিন্তু শুনতাম স্বাধীনতা বিরোধী কিছু মানুষ তখনো বাংলাদেশের জল হাওয়ায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের রাজনীতি অনেক অন্ধকার গলি ধরে হেঁটে আজকের এই দিনে এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জন নেত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা বিরোধী সেসব মানুষদের বিচারের আওতায় এনে মৃত্যু দ- কার্যকর করেছেন। কলঙ্ক মুক্ত করেছেন জাতিকে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে চাই আগামীর বাংলাদেশে। সেই চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যাবার মধ্যেই নিহিত আছো লাখো শহীদের আত্মার শান্তি। যাঁর এই বাংলাদেশ নামের ভূখ-ের জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন করেছিলেন। তাঁদের বিসর্জনের ফল স্বরূপ আজকের মাতৃভূমি। সেই মাতৃভূমির জন্য আমরা জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত থাকবো এই প্রতিজ্ঞা করা উচিত সকল কিশোর ও যুবকদের। কারণ তাদের হাতেই রইলো ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।
আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে শহীদের রক্তস্নাত এই মাটি বা দেশের ভার। বিজয় দিবস অনেক আনন্দের উদযাপন, অনেক ত্যাগের উদযাপন। আমাদের এই আনন্দ ও ত্যাগের মহিমা আমাদের হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যাবো ভবিষ্যত উন্নত বাংলাদেশের দিকে, যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন থাকবে না, সামাজিক বৈষম্য থাকবে না, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক নিরাপত্তা থাকবে সবার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে সব ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত দেশের দিকে যাত্রা করেছি। সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার হাতে। দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগও আমরা নষ্ট করবো না এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা উচিত আজকের বিজয় উৎসবে।শহীদদের রক্তের ঋণ হয়তো রক্ত দিয়ে শোধ করতে পারবো না। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে শ্রমে-ঘামে দেশের জন্য কাজ করে গেলেই শহীদদের এ মহৎ আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে পারবো।

সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬

ঈশ্বর নন্দী লেইন

http://bangla.thereport24.com/article/174665/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE

সুকান্তের বাসায় যাই না কতোদিন
ঈশ্বর নন্দী লেইনের শেষে সবুজ শোভিত দোতলায়
শহরে একটুখানি গ্রাম যেন ঢুকে গেছে এখানে
ঘণ্টির অবিরত শব্দে জাগে নরম সকাল
ধূপধুনোর গন্ধে পাখিরা গেয়ে ওঠে গান
পুষ্পবিল্লপত্র শোভিত সংসারে
ঈশ্বরের ঘুম ভাঙে অরূপ সূর্যের শুভ্রতায়
সুকান্ত কখনো কি জেনেছে ঈশ্বর নন্দী কই?
ঈশ্বর নন্দী কখনো কি প্রীতিলতার সতীর্থ ছিল?
সে কথা জানে না কেউ
সুকান্তকেও জিজ্ঞেস করিনি কখনো
অথচ ভগবানের ভোগে অথবা
অন্নকূটের সহস্র নিরামিষ ব্যঞ্জনে
পুরো বাসা হয়ে উঠতো প্রার্থনালয়
বুঝিনি কতোটা আশির্বাদ দিয়েছিল ঈশ্বর!
ভার্সিটির বিক্ষিপ্ত সময়ে সুকান্ত ছিল বহুরৈখিক চিন্তার সরোবর
ক্রমশ ডুবে গেছি গণিতের অভেদ্য থিয়োরি আর সল্যুশনে
রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণের জ্ঞানগর্ভ আলো ছিল চোখে তার
ত্রিকালের সহস্র প্রশ্নের অন্বয়ের ভেতর
কখনো আসেনি ঈশ্বর নন্দীর কথা
তখনো পড়িনি মার্কসবাদ
পড়িনি পথের দাবী অথবা শেষ প্রশ্ন
শুধু উচ্ছ্বল রমণীর ছলনায় কেটেছে কবোষ্ণ কাল।
সবেমাত্র দ্বিতীয়বার পড়ে শেষ করেছি শেষের কবিতা
তখনো কাটেনি তেমন প্রেম ও বিচ্ছেদের রহস্য।
ঈশ্বর নন্দীকে একাত্তরের পর আর কেউ দেখেনি?
কখনো জানতে চাইনি তা
টেলর, ক্যান্টর, ডি’মইবারস আর আর্গন্ডদের মাঝে
কেটেছে সকাল-দুপুর, অলৌকিক ঈশ্বর কখনো আসেনি কাছে।
শহরের অন্যকোন লেইনে ভোর হয় কৃষ্ণপ্রাণ সুকান্তের
৪৭/৫২, ঈশ্বর নন্দী লেইন, দিদার মার্কেট, চট্টগ্রাম
ঠিকানায় থাকে না এখন, আসে না ঘন্টিময় ভোর
ঈশ্বর নন্দীর খবরও নেয় না কেউ!

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

Three poems by Shekhar Dev




A Sharp Dark

I have created some dreams
And a prayed trench with sharp dark in hand
The combative mind in tune
Exult with ancient light
The lost love revives in indifferent behave.

Your smooth bed is yearning
Drunken bird in upcoming uncertainty of fire
Suddenly return in available beauty
Wherein boundless recreation
And a magic body colored with water melon.

Oh dear, don’t give forbidden pain
With the name of Radha
Taking sharp vermilion in your forehead
Set free the balloon of fire that flames up slowly.
Perhaps, it will fly in as ash
In the night of separation
To give a sharp dark.



The Gloomy Heaven

Dark gathers before sunset. I have thought what a corporate cataract comes
in my eyes! Rubbing eyes with hand, I have entered in the primal hole with
sun in armpit. Grown moon and Helium star are glimmering in hole. The
goddess of Binoy has been caught in strange art. A fairy put off her colorful
resources in love of dark. Drunken fairy with great wine said, why my body
collapse with your touch? Oh sunken man, don’t touch me dear, just drink.




South and West

My south cries restlessly, dreams call from west. A brave tune spread all
around, give her some from them. Beautify my hand with tiny colored
flower and sweet smell. Nights are lightening with glow-worm of inner pain.
Dam-breaking boundless waves swing a ship of mind. Mind said what
fragrance do you get from ear-drop of Karnafuly? I have a great empire in
sky but society. I find eternal haven exchanging your mind. I am innocent
hearing the south, Nights stay up after passing days and nothing comes in
fix. Months are floating away, years lost, increasing narcissism. The
sleeping bird opens her eyes, future is appeared. Pavement will be created
with dense smile if the love is true.



Bio: Shekhar Dev was born in 1985 at Chittagong  in Bangladesh, a South Asian country. Poet's language is Bengali. Two of his poetry collections have been published in Bangladesh. These are 'School of Ancient Practice' (2014) and 'Supreme Liberal Mind' (2016). He completed his degree in Mathematics and post graduation in Pure Mathematics from Chittagong University in Bangladesh. These three poems are from his 2nd poetry collection 'Supreme Liberal Mind.'


http://heroinchic.weebly.com/blog/three-poems-by-shekhar-dev

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

শেখর দেব-এর তিনটি সনেট


শেখর দেব-এর তিনটি সনেট


শেখর দেব-এর তিনটি সনেট
তীরের আগুন
অনন্ত তৃষ্ণার রাত কেটেছে করুণ
পৃথিবী উঠেছে কেঁপে সকালের রোদে
ধরেছি হৃদয় ভাষা বুঝিনি মরণ
এতোটা বিষাদ কেন আমূল আমোদে।
সবকিছু ভুলেচুকে গড়েছি উপমা
অবারিত আঙিনায় বেঁধেছি বাসর
চারদিকে কোলাহল হেসেছে পরমা
হাসিতে লুকানো ছিল ব্যথার নহর!

তীরের আগুন নিয়ে বেড়েছে দু’চোখ
অসহায় প্রতিবাদে জাগে নাকো মুখ।
এমনি নিশ্চিত ফল জেনেছে সবাই
বলেছে কিসের নেশা ডুবিয়েছে শেষে
ঘুড়ির উড়াল দেখে ধরেছো নাটাই
পৃথিবীর মায়া নিয়ে উড়ে অবশেষে!
জীবনের সব রঙ
এত কথা অকপট সরল সহজ
বলেছি তোমার কাছে দিবস প্রভাতে
কিছু তার নীরবতা বাকিটা সবুজ
মিশে আছে বুকেপিঠে অমাতীর্থ রাতে।
বহুপথ পাড়ি দিয়ে এসেছি এখানে
জীবনের সব রঙ ঘুরেফিরে আসে
যতো কাছে ডেকেছিলে হৃদয় বাগানে
ছলনার বহুসুর তান ধরে হাসে।

পথের পুলক তবে রেখেছি কুড়িয়ে
যাতনার সব ফুল দিয়েছি ছড়িয়ে।
তবুও পথের আমি পথিক ভীষণ
ঘুরে ঘুরে ফিরে আসি মানুষের ভীড়ে
রেখে যাই প্রেম সুধা আর কিছু ঋণ
কে তবে রইবে আজ আমাকেই ঘিরে।
তফাতে বেড়েছে রাত
এমন দিনের শেষে পাইনি কিছুই
অবহেলা রাশি রাশি গোপনে মেশানো
চেয়েছি কেমন সুখ বুঝিসনি তুই
অকারণ চুপেচাপে ভুবন রাঙানো।
তোমার নিশ্বাসে আছে অলস হতাশা
নীরবে নির্ণীত কর সুকরুণ সুর
খুঁজেছি যতই সুখ আর ভালোবাসা
তফাতে বেড়েছে রাত বিরহ মধুর।

এমন অস্থির মুখ মনের দর্পণ
ফাঁকা সব বুলি নিয়ে এ কোন অর্পণ?
বেশি কিছু নাই আশা তোমাকে চেয়েছি
মন যদি নাই টানে কেন এই ঘর
ঘরের অধিক তুমি আঁধারে পেয়েছি
আপন ভুবন জুড়ে করে রাখো পর!

http://www.anandaplus.com/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%9F/

বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৬

কবিতার চিন্তা ও চেতনা

শেখর দেব
http://www.fns24.com/details.php?nssl=c1537c9ed39baee3476c6fdd666b5fd8&nttl=1407201534126#.Vvzeh3qeXIV14 Jul 2015   09:20:07 PM   Tuesday BdST A- A A+
 কবিতার চিন্তা ও চেতনা
কবির চিন্তা ও চেতনার গভীরতা কবিতার রসদ। মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। চিন্তার স্বাভাবিক প্রবণতা কবিকে কাব্য শরীর দাঁড় করাতে সাহায্য করে। চেতনা চিন্তাকে পরিশীলিত করে। সম্যক জ্ঞান কবিতায় আনে সুনির্দিষ্ট বার্তা। এ বার্তা প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তা নয়। যেহেতু কবিতার ভাষা মন ও মননের সংমিশ্রণ, এর বার্তাও একান্ত মনো-মননগত। এ বার্তা মানুষের মনের উৎকৃষ্ট অনুভূতি ও মননের চেতনাগত বার্তা। উদ্দেশ্যহীন মনোভাষা আবেগতাড়িত কবিতার জন্ম দেয়। তাই মনন দিয়ে মনকে পরিশীলিত করতে হয়। মনের চিন্তাগুলো ভাষা হবার আগে চেতনায় পরিশুদ্ধ হলে কবিতা হয়। অন্যথায় মনের ভাষা ও মুখের ভাষা এক হয়ে যায়। অবশ্য মুখের ভাষা মস্তিষ্ক ও মনের চিন্তা প্রসূত। তাহলে মনের ভাষা ও মুখের ভাষায় পার্থক্য কই? পার্থক্য আছে। আছে বলেই মাঝে মাঝে মনের কথা ঠিক প্রকাশ করে উঠতে পারি না। আমরা নির্বাক হই, ভাষাহীন হই। তাই কবিতা মনন বিশ্লেষিত মনের ভাষা। এখানেই কবিতা ও কথাসাহিত্যে পার্থক্য। কবিতা যদি মুখের ভাষা হয়ে যায় তা শীল্পমূল্য হারায়। কবির আবেগ কবিকে সমৃদ্ধ করে যেমন ডুবায়ও তেমন। আবেগের পরিশীলন না হলে কবিতা উর্ত্তীন্ন হয় না। আবেগ বর্ষার জমাট বাঁধা কালো মেঘের মতো। তার একটাই ফল তুমুল ঝরে যাওয়া, চরাচর ভাসানো। কিন্তু বৈশাখের মেঘ অনেক রহস্যজনক। এখন কালো হয়ে এলো আবার এখন ফর্সা হয়ে আসছে। এখন ঢেকে দিল নীল আকাশ, আবার সমহিমায় হাজির। এর মধ্যে একটা ধাঁধা আছে। এটাই কবিতা। তাই কাঁচা আবেগ কবিতাকে বর্ষার মেঘের মতো ভারী করে তোলে, যার ফল সুনিশ্চিত। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী। চিন্তায় আবেগ থাকে, তাই চেতনার দরকার হয়। কবির এমন কোন দায় নেই কবিতায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় বোঝাতে হবে। বোঝাতে গেলেই  কবি কাব্য মঞ্চে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কবির চিন্তা ও চেতনার সমন্বয়ে কবিতা হয়। বোঝার দায়িত্ব পাঠকের। না বুঝলেও তেমন ক্ষতি নেই কারণ আগেই বলেছি কবিতার ভাষা মনের ভাষা। তাই মনের ভাষা সবসময় বুঝতে হবে এমন কথা নেই। আমরা কজন নিজের মনকে বুঝি? আবার অন্যের মন! তবে অনুভূতির একটা মজা আছে। অনুভূতির মজা মুখে বলে প্রকাশ যোগ্য হয়ে ওঠে কম। অনুভূতির কথা অনুভবের ব্যাপার। এই অনুভবের জন্য চাই স্থির মন। অস্থিরতা কবি ও কবিতা দুটোকে নষ্ট করে। ঠিক তেমনে পাঠকের ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই একই কবিতা পাঠকবেধে মূল্যায়নের ভিন্নতা দেখা যায়। পাঠকের মানসিক উচ্চতা কব্যপাঠে সাহায্য করে। মানসিক উচ্চতা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে না গেলে কবিতা দুর্বোধ্যই থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই কাব্য পাঠে যোগ্যতার প্রশ্ন আসে। শিল্প আজীবন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকেই আনন্দ দিয়েছে এবং দিবে। সাহিত্যের উৎকৃষ্ট শিল্প হলো কবিতা। পাঠকের চিন্তার জগত তার চেতনার চেয়ে বেশি নয় কিন্তু কবির চিন্তার জগত তাঁর চেতনার চেয়ে বেশি, এটা কবির স্বভাবগত। এজন্যই একজন কবি, কবি হয়ে ওঠেন। চিন্তা মানুষের স্বভাবগত বিধায় তা সাধারণত দৃশ্যগোচর বস্তু দর্র্শনে সৃষ্টি হয়। তার পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটো দিকই আছে। তবে চেতনার পজেটিভ ছাড়া নেগেটিভ কোন দিক আছে বলে মনে হয় না। চিন্তার জন্ম চোখ থেকে আর চেতনার জন্ম মন থেকে। এটা বলা যায় বর্হিদৃষ্টি ও অর্ন্তদৃষ্টির সমন্বয় হলে একজন মানুষ ভালো মানুষ হয় তার কাজে ও কর্মে। কবি মাত্রই ভালো মানুষ কারণ সে কবিতা লেখে। অবশ্য সাধু কবিদের ফাঁকে আজকাল অসাধু কবিও দেখা যায়। সাধু কবি তার চারপাশের পরিবেশের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার মধ্যে কবি মুক্তি খুঁজে পান। সেই মুক্তি বিন্দুমাত্র সেচ্ছাচারিতা নয়, কবির অবাধ বিচরণ। কবির সমগ্র সত্ত্বায় গেঁথে আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মাঝে। অসাধু কবি আসলে কবি নয় অসাধু। তারা আসলে ধ্যান ভ্রষ্ট বা সাধনভ্রষ্ট সাধু। তারা সাধুর ভান ধরে আছে। তাই মানুষ মাত্রই কবি নয় আর কবি মাত্রই সাধু কবি নয়।
কবিতার নির্দিষ্ট কাঠামো আছে, এ যেমন সত্যি, সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েও কবিতার ক্যানভাস রঙিন করে তোলা যায় শব্দ ও ভাবের সুষম সমন্বয়ে। শব্দের শক্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া একজন কবির বেশ প্রয়োজন। কবিতার বড়ো পরিসর গ্রহণে খুব অনিহা। তাই ছোট ক্যানভাসে কবিকে কবিতা ফোটাতে হয় যতনের সাথে। যাকে আবার কবিতাও হতে হয়। শব্দ যুগপৎ দৃশ্য ও ভাবের জন্ম দেয়। শব্দের মধ্যে দৃশ্য খুব সহজে ধরা দিলেও ভাবের ক্ষেত্রে তেমনটি না। একটি শব্দ পুরো একটি ভাবকে ধারণ করতে পারে না। শব্দের সাথে শব্দের বন্ধুত্ব না হলে ভাব মাঠে মারা যায়। কবি পাঠককে কবিতার ভেতরে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়। তাই কবিতায় কবির ভাব সুস্পষ্ট করতে হলে শব্দের গাঁথুনি হতে হয় যুৎসই। শব্দের পরশে শব্দের অর্থগত পরিবর্তন ঘটে। যা তার শাব্দিক অর্থকে ছাড়িয়ে যায়। উপহার দেয় নতুন কিছু। এখানেই কবির সার্থকতা। কবির অর্ন্তজগতে প্রতিটি শব্দ জোনাকি হয়ে জ্বলে যা বর্হিজগতের সাথে সঙ্গতি সুসংহত করে তোলে। মাঝে মাঝে শব্দে শব্দে গড়ে ওঠে ধাঁধা। কবিতার ভাবে লাগে বহুরৈখিকতার পরশ। কবিতার ভাবের বিভিন্নতা কবিতাকে রহস্যময় করে তোলে। কবিতার এ রহস্য চিরন্তন। স্বভাবগতভাবে কবি এ রহস্যের খেলা রপ্ত করেন। কবি খুব সহজ কথায় অনেক মূল্যবান ভাব প্রকাশ করতে পারে। মূল্যবান মানে সৌন্দর্যের মূল্য। যা একান্তই মনোগত ব্যাপার, উপলব্ধি করতে পারলে ভালো লাগা কাজ করে। ভালো না লাগলে কবিতা ব্যর্থ হয়, সাথে কবিও। শব্দের সুষম সমন্বয় কবিতাকে ফুটিয়ে তোলে ভোরের সূর্যমুখীর মতো আবার শব্দের বাহুল্য বা অসমন্বয় কবিতাকে ডোবায়। অপ্রয়োজনীয় শব্দ কবিতাকে মেদবহুল করে, কবির আবেগ কবিকে এই ভুল করিয়ে নেয়। তাই আবেগের পরিশীলন জরুরী।
কলম খাতার কাছে আসলেই বা কিবোর্ড আর মনিটর সামনে থাকলেই কবিতা হয় না, হয় কথা। শুধু কবির কলম ও খাতা বা কিবোর্ড আর মনিটর সামনে থাকলেই কবিতার জন্ম হয়। কবি মানুষের অভিন্ন কিন্তু চিন্তা ও তার রূপায়নে ভিন্ন। দৃশ্যমান সবকিছু কবি অন্য দশজনের মতো দেখে এবং বোঝে কিন্তু একজন কবি তা কালিতে চমক দিতে পারে বলে সে কবি। কবির মানসিক সত্তা ও সামাজিক সত্তার মিল অমিলের কারণে কবিতা আসে। কবিতা হয়ে যাওয়ার বিষয়। মূলত কবিতা শব্দ ও ভাবের অনুপম কলা। সেই কবিতার সাথে সামান্যতম কৌশল কবিতাকে দিতে পারে অন্য মাত্রা। তবে কবিতা কি কৌশল? উত্তরঃ না। তবে কবিতায় কিয়দাংশ কৌশল প্রয়জোন পড়ে। কবির দৃশ্যগত বা চিন্তাগত বা দর্শনগত পীড়ন সবসময় কাজ করে। এসবের সমন্বয়ে একটি ভাব  তৈরি হয় যা শব্দের ডানায় চড়ে ক্রমাগত কবিতার আকাশে উড়ে যেতে চায়। জন্ম হয় কবিতার। এ পুরো প্রক্রিয়ায় আবেগের সংযোগ বা বর্জনের, শব্দের দন্ধের বা বন্ধুত্বের, ভাবের সৌন্দর্যের বা ব্যর্থতার কৌশলে আবর্তিত হয়। কাব্য উদ্দীপনার পরের ব্যাপারটি কৌশল। কাব্য কৌশল। এ জন্য কবিতা কল্পনামূলক শব্দ গ্রহণ করে। যে শব্দে রয়েছে যুগপৎ ভাবের রহস্য ও সৌন্দর্যের ঝিলিক।
ছন্দ শব্দকে সুগঠিত করে, কবিতাকে দেয় একটি ফর্ম। কবির মনে একধরনের সুর কাজ করে। এ গানের সুরের মতো নয় য্যান ঠিক। কবিতার সুর। কবিতায় এ সুর ধ্বনিত হয় শব্দে শব্দে। এ সুরই কবিতার ছন্দ। একজন কবি মেপে মেপে নয়, প্রকৃতিগতভাবেই এটা রপ্ত করেন। যদি অন্তরে সুর খেলা করে, কবিতায় ছন্দ আসবেই। কবিতায় থাকবে চিত্রকল্প বা কল্পচিত্র। শব্দের সহজ সমন্বয়ে যা গড়ে ওঠে। এ চিত্র একান্তই কবির আশেপাশে ছড়িয়ে  আছে। কবিতায় তা ধরার জন্য চাই সহজিয়া মন ও মনন। খুব সাধারণ চিত্র কল্পনায় ফুটিয়ে তোলা যায় অসাধারণ করে। এ ক্ষেত্রেও কবিকে সেই চিত্রকে ফোটানোর জন্য যুৎসই শব্দের সমন্বয় জরুরী হয়ে ওঠে। কবি তা পারে। কবির অদ্ভুত এ ক্ষমতাটি রয়েছে। না বলা কথা সে বলে দেয়, না বোঝা কথা সে বুঝিয়ে দেয়।
শব্দমেদ যেমন কবিতাকে কাব্যরসহীন করে ঠিক তেমনি ভাবের বিচ্ছিন্নতার মাঝে কবি শৃঙ্খলা তৈরির মুন্সিয়ানা দেখাতে পারলে কবিতা সার্থকও হয়ে ওঠতে পারে। তবে তা কবির কাব্যশক্তিতে নিহিত। কাব্যশাসন কবিতাকে নিরোগ করে। কবিতাকে বাঁচায় বিচ্ছিন্নতার বলি হতে। কবির কাছে শব্দ ফুলের মতো। যার আছে সৌন্দর্য ও কোমলতা। কবির সুন্দর চেতনা জরুরী। কবিতা শিল্পটাই মূলত সুন্দরের শীল্প। এ শিল্প কবির ভাষাবোধকে সমৃদ্ধ করে।
কবিতে সময় সচেতন হতে হয়। কবিতায় সময়কে ধারণ করতে না পারলে কবি ব্যর্থ। এই ধারণের ব্যাপারটি হতে পারে কবিতার বিষয়, আঙ্গিক ভঙ্গি এসবের সমকালিন প্রবণতাকে ধারণ। কবির একটি দেশ থাকে। যে দেশের আলো বাতাসে সে বেড়ে ওঠে। যার মাটির উপর হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে শিখে। আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, বর্ণিল সংস্কৃতি। একজন কবি এর সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, খোঁজেন সংগতি আর অসংগতি। কবিতা এ সবের প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে সুপ্রাচীন।‘চর্যাপদ’ হতে বাংলা কবিতার যাত্রা। চর্যাপদের সময়  হতে এ  পর্যন্ত রাশি রাশি কবিতা রচিত হয়েছে শত শত কবির হাতে। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনাকে ধরতে হলে কবিকে সাঁতার দিতে হবে এ কাব্য সমুুদ্রে। বুঝে নিতে হবে কবিতার বাঁক ও প্রবণতা। প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুঁজি করে সমকালিনতার উপর ভর করেই কবিতাকে অনন্তের মুখ দেখাতে হয়। শেকড়জাত বিষয়গুলো কবিতায় নিয়ে আসার আলাদা কোন কৌশল নেই। কবিকে এ ব্যাপারে কোন অত্যধিক প্রচেষ্টারও প্রয়োজন পড়ে না। এ বিষয়গুলো আপনাআপনি আসে কারণ একজন  কবি তাঁর শেকড়ের উপর ভর করেই বেড়ে ওঠে। শেকড়জাত চিন্তনে, ভাষ্যে এসবের চিত্র ফোটে। কবির কাজ শুধু কবিতা লেখা নয়। আর দশজনের মতো তাকেও যাপন করতে হয় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার জীবন। যাপনের আনন্দ-বেদনা কবিতায় আসে। এসবের মাঝে আমাদের ঐতিহ্য চেতনা সচেতনভাবে ঢোকাতে হয় কবিকে। তাই আমাদের শেকড়জাত বিষয়গুলো নিয়ে পঠন-পাঠন জরুরী। তাই কবিকে পড়তে হয় বেশি লেখার চেয়ে।

ধৃতরাষ্ট্রের দেশে ][ শেখর দেব

http://saatdin.blogspot.com/p/blog-page_3087.html

রক্ত পোড়ার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আর
দেহের বিৰত মাংসের সমান হিংস্র সভ্যতা!
মানুষ কবে মানুষ হবে মধ্যপ্রাচ্যের গুহায়?
পবিত্র শিশুর বাগানে যে ঢালে আগুনের লাভা
সে কী মানুষ হবে না?
পিলে চমকানো যে ছবি ফোটে বোমার হুঙ্কারে
তাতে ধৃতরাষ্ট্রদের চোখের ঠুলি কখনো যাবে না খুলে
মানুষ জাগো
জেগে ওঠো আলো হয়ে অন্ধ রাজাদের চোখে!

সাক্ষাৎকার