দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত (১৮.১২.২০১৫ইং)
------------------------------------------------------
যাপনের উৎসারিত পঙ্ক্তিমালাই কবিতা। খুব সাধরণভাবে কবিতাকে এভাবে বলা যায়। অন্যভাবে বল্লে কবিতা মন ও মননের দ্বৈত মিথস্ক্রিয়ার একক প্রকাশ। কবিতা কখন কবিতা হয়? কবিতা কি সত্য ভাষণ? কবিতা কি জীবনের অনুবাদ? তিনটি প্রশ্ন পাঠকের কাছে ছুঁড়ে দিলে বা কবির কাছে, কে কি বলবেন? পাঠক ভাবুন। প্রথম প্রশ্নটির উত্তর হতে পারে বহুরকমের। আমার উত্তরের আগে আরো কিছু কথা যোগ করতে হয়। কবিতা মূলত শিল্প। শিল্প শব্দটার সাথে উচ্চ মার্গীয় একটা ব্যাপার জড়িত রয়েছে। যেহেতু কবিতা শিল্প এবং সাহিত্যের প্রধানতম শিল্প মাধ্যম সেহেতু কবিতা কখন কবিতা হয় সেটা বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে। আমি কবিতার ব্যাকরণে যাবো না। কবিতার স্বাভাবিক একটি গুণ হলো মোহিত করা। মোহন জাদুতে আবিষ্ট করার মতো কবিতার অন্যরকম এক ক্ষমতা আছে। আছে মন ছুঁয়ে যাবার মত বৈশিষ্ট। অতএব কবিতা সেটাই যেটা আমাদের বহুরৈখিক আবেশে আবদ্ধ করে আর মনকে দোলা দিয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরেও মতভেদ হতে পারে। আমার কাছে কবিতা সত্য ভাষণ নয়। তার মানে কবিতা কি মিথ্যা? অবশ্যই না। কবিতা মিথ্যে নয় তবে তা সত্যের কাছাকাছি বা তার চেয়ে কিছু অধিক। তৃত্বীয় প্রশ্নটির উত্তরে বলতে হয় কবিতা অবিকল জীবনের অনুবাদ নয়। তবে জীবন কেমন হতে পারে বা কেমন হতে পারতো তারই অনিবার্য প্রতিফল। কবিতা এমনই। উপরোক্ত তিনটি প্রশ্ন আমার মনে এসেছে আলোচ্য কবির ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’ কবিতাগ্রন্থটি পড়ে। কাব্য জগতে কবি কানিজ মাহমুদের আগমন এই কবিতগ্রন্থটির মাধ্যমে। মলাটে আবদ্ধ হবার তীব্র বাসনা হতেই গ্রন্থটির জন্ম। কবি শাহিদ হাসান গ্রন্থটির ফ্ল্যাপে লিখেছেনÑ ‘তারুণ্যের পাটাতনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কানিজ মাহমুদ। তার লেখাগুলো পাঠ করে অন্তত তাই মনে হলো।’ কবি শাহিদ হাসান ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু আলোচ্য গ্রন্থটি পড়ে আমার মনে হয়েছে একজন প্রচ- সম্ভাবনাময় কবি-মন কানিজ মাহমুদের মধ্যে লুকিয়ে আছে। অনুকূল পরিবেশ পেলেই যেন সে মেলে দেবে তার কবিত্বের ডানা। এটা মনে হবার পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথমত আমার কাছে কবি তাকেই মনে হয়ে যিনি মানুষ হিসেবে সাধু। অর্থাৎ সাধু মানুষই প্রকৃত কবি। সাধু বলতে আমি তাঁকেই বোঝাচ্ছি যিনি বাক্যে কর্মে ও চিন্তায় মনুষ্যত্বকে লালন করেন। আর কোন কবি সাধু মানুষ কি না সেটা বোঝার জন্য তার কবিতাই যথেষ্ট ব্যক্তিগত জানাশোনার প্রয়োজন পড়ে না। ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’র কবিতাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সাধু মানুষকে প্রতিনিয়ত সমাজের, রাষ্ট্রের অসংগতি ও ব্যক্তি মানুষের অমানবিক আচরণকে চিহ্নিত করতে দেখি। যার ক্ষোভগুলো যেন সংযমের সাধনায় ঋজু পঙ্ক্তি হয়ে বের হয়ে এসেছে কবির বোধের গভীর হতে। আবার কখনো মহান মানুষের চোখে পথ দেখায় ব্রতী হন কবি। তাই হয়তো ‘প্রত্যাশা’ করেন অনেক কিছু। কখনো ‘কাস্ত্রোর বাণী বা চেগুয়েভারার ডাইরি হাতে’ উড়াতে চান শান্তির পায়রা। কবি বিপ্লবের পক্ষেই মাথা তুলে দাঁড়াতে চান অনায়াসে। কবি পৃথিবীর পাপ পুণ্যের হিসাব কষতে বসেন। পাপ-পুণ্যের বিশ্লেষণ করে কবি দেখেন ‘জন্ম নিলেই পাপী হয়/মৃত্যুই পুণ্য।’ মাঝে মাঝে কবি বহুদূর হেঁটে যান ‘পথের দৈর্ঘ্য’ মাপার জন্য। জীবন নামক পথের পরিমাপ করে যান কবিতার পরতে পরতে। ‘ভালোবাসা’র রহস্য ভেদ করতে গিয়ে কবি আবিষ্কার করেন ‘পৃথিবীর আদিম কষ্টের নাম ভালোবাসা’। কবি কোন তরুণীর বৈশাখ যাপন তুলে এনেছেন সুন্দরভাবে। বলেন ‘পাখিদের জবানবন্দিতে বৈশাখ এসেছে।’ প্রেম-ভালোবসার বহুরৈখিক স্ফূরণ কাব্যটিকে আবেগঘন করেছে। কিশোরীবেলা হতে যুবতীবেলার অনুভূতিমালার সমন্বয় প্রতিটি কবিতার অঙ্গে আলো ফেলেছে প্রখরভাবে। নারীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীদের খেলনাসম তুলনার বিরুদ্ধে কবির কাব্য স্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে কিছু কবিতায়। কিছু কবিতা নিতান্তই সাময়িক অনুভূতির চিত্রমালা যা কবি হয়তো নিজেই অস্বীকার করে বসতে পারে এখন। আবার কিছু কবিতায় বয়ঃসন্ধির তীব্র মাদকতাও দৃশ্যমান হয়। রমণের অনুষঙ্গকে রূপায়িত করে বলেন ‘ভালোবেসে তারার নক্ষত্র হয়/ তিল তিল করে মেয়েরা হয় রমণী’। ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’ নিয়ে লেখাটা যখন লিখছি তখন বইটি প্রকাশের এক বছর হয়ে গেছে। অর্থাৎ বইটি প্রকাশের এক বছর পরে এসে কবি কানিজ মাহমুদ ভিন্ন স্বর নতুন কাব্য দ্যোতনা নিয়ে আমাদের সামনে তাঁর দৃপ্ত পদচ্ছাপ রেখে চলেছেন। ভবিষ্যতে কবি নিজেকে ছাড়িয়ে কবিতার জগতে অন্য এক অবস্থানে নিজেকে পৌঁছে দিবেন বলে আমার ধারণা।
------------------------------------------------------
যাপনের উৎসারিত পঙ্ক্তিমালাই কবিতা। খুব সাধরণভাবে কবিতাকে এভাবে বলা যায়। অন্যভাবে বল্লে কবিতা মন ও মননের দ্বৈত মিথস্ক্রিয়ার একক প্রকাশ। কবিতা কখন কবিতা হয়? কবিতা কি সত্য ভাষণ? কবিতা কি জীবনের অনুবাদ? তিনটি প্রশ্ন পাঠকের কাছে ছুঁড়ে দিলে বা কবির কাছে, কে কি বলবেন? পাঠক ভাবুন। প্রথম প্রশ্নটির উত্তর হতে পারে বহুরকমের। আমার উত্তরের আগে আরো কিছু কথা যোগ করতে হয়। কবিতা মূলত শিল্প। শিল্প শব্দটার সাথে উচ্চ মার্গীয় একটা ব্যাপার জড়িত রয়েছে। যেহেতু কবিতা শিল্প এবং সাহিত্যের প্রধানতম শিল্প মাধ্যম সেহেতু কবিতা কখন কবিতা হয় সেটা বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে। আমি কবিতার ব্যাকরণে যাবো না। কবিতার স্বাভাবিক একটি গুণ হলো মোহিত করা। মোহন জাদুতে আবিষ্ট করার মতো কবিতার অন্যরকম এক ক্ষমতা আছে। আছে মন ছুঁয়ে যাবার মত বৈশিষ্ট। অতএব কবিতা সেটাই যেটা আমাদের বহুরৈখিক আবেশে আবদ্ধ করে আর মনকে দোলা দিয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরেও মতভেদ হতে পারে। আমার কাছে কবিতা সত্য ভাষণ নয়। তার মানে কবিতা কি মিথ্যা? অবশ্যই না। কবিতা মিথ্যে নয় তবে তা সত্যের কাছাকাছি বা তার চেয়ে কিছু অধিক। তৃত্বীয় প্রশ্নটির উত্তরে বলতে হয় কবিতা অবিকল জীবনের অনুবাদ নয়। তবে জীবন কেমন হতে পারে বা কেমন হতে পারতো তারই অনিবার্য প্রতিফল। কবিতা এমনই। উপরোক্ত তিনটি প্রশ্ন আমার মনে এসেছে আলোচ্য কবির ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’ কবিতাগ্রন্থটি পড়ে। কাব্য জগতে কবি কানিজ মাহমুদের আগমন এই কবিতগ্রন্থটির মাধ্যমে। মলাটে আবদ্ধ হবার তীব্র বাসনা হতেই গ্রন্থটির জন্ম। কবি শাহিদ হাসান গ্রন্থটির ফ্ল্যাপে লিখেছেনÑ ‘তারুণ্যের পাটাতনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কানিজ মাহমুদ। তার লেখাগুলো পাঠ করে অন্তত তাই মনে হলো।’ কবি শাহিদ হাসান ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু আলোচ্য গ্রন্থটি পড়ে আমার মনে হয়েছে একজন প্রচ- সম্ভাবনাময় কবি-মন কানিজ মাহমুদের মধ্যে লুকিয়ে আছে। অনুকূল পরিবেশ পেলেই যেন সে মেলে দেবে তার কবিত্বের ডানা। এটা মনে হবার পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথমত আমার কাছে কবি তাকেই মনে হয়ে যিনি মানুষ হিসেবে সাধু। অর্থাৎ সাধু মানুষই প্রকৃত কবি। সাধু বলতে আমি তাঁকেই বোঝাচ্ছি যিনি বাক্যে কর্মে ও চিন্তায় মনুষ্যত্বকে লালন করেন। আর কোন কবি সাধু মানুষ কি না সেটা বোঝার জন্য তার কবিতাই যথেষ্ট ব্যক্তিগত জানাশোনার প্রয়োজন পড়ে না। ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’র কবিতাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সাধু মানুষকে প্রতিনিয়ত সমাজের, রাষ্ট্রের অসংগতি ও ব্যক্তি মানুষের অমানবিক আচরণকে চিহ্নিত করতে দেখি। যার ক্ষোভগুলো যেন সংযমের সাধনায় ঋজু পঙ্ক্তি হয়ে বের হয়ে এসেছে কবির বোধের গভীর হতে। আবার কখনো মহান মানুষের চোখে পথ দেখায় ব্রতী হন কবি। তাই হয়তো ‘প্রত্যাশা’ করেন অনেক কিছু। কখনো ‘কাস্ত্রোর বাণী বা চেগুয়েভারার ডাইরি হাতে’ উড়াতে চান শান্তির পায়রা। কবি বিপ্লবের পক্ষেই মাথা তুলে দাঁড়াতে চান অনায়াসে। কবি পৃথিবীর পাপ পুণ্যের হিসাব কষতে বসেন। পাপ-পুণ্যের বিশ্লেষণ করে কবি দেখেন ‘জন্ম নিলেই পাপী হয়/মৃত্যুই পুণ্য।’ মাঝে মাঝে কবি বহুদূর হেঁটে যান ‘পথের দৈর্ঘ্য’ মাপার জন্য। জীবন নামক পথের পরিমাপ করে যান কবিতার পরতে পরতে। ‘ভালোবাসা’র রহস্য ভেদ করতে গিয়ে কবি আবিষ্কার করেন ‘পৃথিবীর আদিম কষ্টের নাম ভালোবাসা’। কবি কোন তরুণীর বৈশাখ যাপন তুলে এনেছেন সুন্দরভাবে। বলেন ‘পাখিদের জবানবন্দিতে বৈশাখ এসেছে।’ প্রেম-ভালোবসার বহুরৈখিক স্ফূরণ কাব্যটিকে আবেগঘন করেছে। কিশোরীবেলা হতে যুবতীবেলার অনুভূতিমালার সমন্বয় প্রতিটি কবিতার অঙ্গে আলো ফেলেছে প্রখরভাবে। নারীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীদের খেলনাসম তুলনার বিরুদ্ধে কবির কাব্য স্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে কিছু কবিতায়। কিছু কবিতা নিতান্তই সাময়িক অনুভূতির চিত্রমালা যা কবি হয়তো নিজেই অস্বীকার করে বসতে পারে এখন। আবার কিছু কবিতায় বয়ঃসন্ধির তীব্র মাদকতাও দৃশ্যমান হয়। রমণের অনুষঙ্গকে রূপায়িত করে বলেন ‘ভালোবেসে তারার নক্ষত্র হয়/ তিল তিল করে মেয়েরা হয় রমণী’। ‘নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা’ নিয়ে লেখাটা যখন লিখছি তখন বইটি প্রকাশের এক বছর হয়ে গেছে। অর্থাৎ বইটি প্রকাশের এক বছর পরে এসে কবি কানিজ মাহমুদ ভিন্ন স্বর নতুন কাব্য দ্যোতনা নিয়ে আমাদের সামনে তাঁর দৃপ্ত পদচ্ছাপ রেখে চলেছেন। ভবিষ্যতে কবি নিজেকে ছাড়িয়ে কবিতার জগতে অন্য এক অবস্থানে নিজেকে পৌঁছে দিবেন বলে আমার ধারণা।
নিষিদ্ধ চন্দ্রমল্লিকা
কানিজ মাহমুদ
প্রকাশক # শাঁখ
মূল্য ১০০ টাকা
প্রকাশকাল # ফেব্রুয়ারি ২০১৫
প্রচ্ছদঃ জাকির হোসেন
কানিজ মাহমুদ
প্রকাশক # শাঁখ
মূল্য ১০০ টাকা
প্রকাশকাল # ফেব্রুয়ারি ২০১৫
প্রচ্ছদঃ জাকির হোসেন