মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
শেখর দেব এর কবিতা

স্মৃতির ধুলো
(শাখীকে)
এখানে নবীন ঘাসের ডগায় জমে থাকা জলের
কোন বিমুগ্ধ ইতিহাস জানা নেই
জানতে চেয়েছি জন্মের স্মৃতি
কিংবা আরো পুরনো জন্মের ইতিহাস
নিশ্চুপ জল গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেল শেকড়ে।
যে আমাকে ছেড়ে গেছে
অথবা ছেড়ে যাবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে
নিজেকে করেছে নতুন আলাদা
তার কাছে কী লুকিয়ে রেখেছিলাম আজ মনে নেই।
সুনীলের বোষ্টমী হয়ে অসমাপ্ত রেখে যায় জীবনের গান
তার হাত ধরে-কেনো পথে নামিনি-তাই ভাবি আজ।
কালো কোন রঙ নয়
তবুও তার অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে বলো-
আমি আর অমন কী সুন্দরী-সব মেকাপের মুগ্ধতা
অথচ তোমার দুচোখে ভেসে ওঠে গত জন্মের স্মৃতি
চেনা পথ মুছে গিয়ে ক্রমশ হয়ে ওঠি নিমগ্ন জাতিস্মর।
বিগত জন্মে ভাটির পথে যখন হেঁটেছি লালনের সাথে
জীবনের বিবিধ দর্শনের ভেতর
তোমাকেই পেয়েছিলাম সাধন সহযাত্রী
শ্যামা রঙের সৌষ্ঠবে কেটেছে সুনিপুণ সাধনা।
অথচ আজ তুমি ফুটে আছো নতুন গোলাপ
ব্যাবিলনের উদ্যান ঝুলে আছে কাজল চোখে
শূন্যের দিকে দৃষ্টিপাত করে ছুঁয়েছো অসীম সীমানা
তোমার লিপজেল ঠোঁটে হয়ে ওঠি মদনমোহন।
অসহায় ঘুরে বেড়ানো পথের ঘাসে যে জল জমে থাকে
আর নিমেষে হয়ে যায় লীন
তার নাম দিয়েছিলাম শিশির
তুমি জানো না- এসবের কিছুই জানো না
এ জনমে কীভাবে কাটাবো বাকিটা পথ...
জীবন জেলে
পাপের কোন সংজ্ঞা নেই
আছে শুধু নিষিদ্ধ আরাম
পুণ্য আর পাপের মাঝে যে সেতু
তার নিচে বয়ে গেছে নদী
সেই নদীর জেলে হয়ে
কেটে যাক বাকিটা জীবন!
বোশেখের শোকগাথা
উৎসবের মেঘ-রাঙা দিনগুলো ফিরে আসে নিবিড় চেতনায়। রঙিন ঠোঁটের রঙে ঝিলমিল চারিধারে বাজে
বাহারি সুর আর প্রেমময় সোঁ সোঁ হাওয়া। উত্তাপের বোশেখী মমতা জড়িয়ে মধুর চিত্ত সুধা ডালে বটের
ছায়ায়। ভোরে সূর্যের সমুখে দাঁড়ানো আমার পা ছুঁয়ে চেয়ে নাও আগামীর অজানা সময়। দুহাতে তোমাকে
তুলে কপালে চুমু চিহ্ন এঁকে দিয়েছি বুকের অনন্ত অনুরাগ।
আট বছর কেটে গেছে বাহারি বন্ধুর পথ...
রঙিন পাঞ্জাবি পাশে লাল পেড়ে শাড়ি নেই। আরো দূরে ঘোরে মাঠের মেলায় নিমগ্ন মানুষ। নাগরদোলার
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে মাতাল কিশোরী ঠিক খুঁজে পায় বেভুল মুগ্ধতা আর বিদগ্ধ বেলা। তুমি শুধু উড়ে গেছো
রঙিন বায়ুর বেলুন।
বোশেখের বিনম্র বেদনা ছেড়ে যাবো কতদূর? কোথায় পাবো সেই নগ্ন অনামিকা আর স্নিগ্ধ ললাট। রেখেছি যতনে
যারে নির্ভার মন সঁপে সে যদি জানে না বুঝে না বলে চলে যায় দূরে। বিদগ্ধ বুকে প্রশান্তি হারায়ে বোশেখের
রৌদ্র প্রতাপে হায় হায় করে বয়সী বাতাস।
কোনদিন আমলে আসেনি অনামিকা স্বর্ণশোভা। জানিনি গোপন ব্যথা জড়িয়ে রয়েছে হাত। বুঝিনি কতো ব্যথা দিতে
পারে বোশেখের রাত। আংটি যে কোরে দিল এতো কিছু অদল বদল।
রাতুল প্রহর
বিনিদ্র রজনী অাঁকে কামক্লান্ত চোখ
নিখুঁত কালো জমে উজ্জ্বল শিরায়
তারা যদি খসে যায় আপাত নিয়মে
অাঁধারে খেলা করে অনন্ত অভিমান।
উড়ে গেছে যে ডাহুক ঝোপের আড়ালে
তার তরে কেবা গায় বিলাপের সুর
জল আছে হাওয়া নাচে হৃদয় ফুলে
খোঁজ করো যতো পারো নতুন আবেগ।
ভোরগুলো তাজা প্রাণে হউক অম্লান
ঝলমল রোদ ওঠে হীরক আমোদ
পেছনের সুর ভুলে সমুখ সমর
তলোয়ার গুনে শুধু রাতুল প্রহর!
শ্মশানে দাঁড়াতে নেই
শ্মশানে দাঁড়তে নেই
দেখাতে নেই আঙুল
মাটিমগ্ন মানুষেরা প্রাণের গন্ধে নড়ে ওঠে
মনে পড়ে যায় লৌকিক সংসার
নিবিড় চুমু অথবা সঙ্গম
বেড়া ঘেরা দেহগুলো কাঁপে উলাসে।
শ্মশানে দেখাতে নেই আঙুল
দাঁড়াতে নেই ক্ষণিক
নচেৎ মাটি আর মানুষ ক্রমাগত আলাদা হয়ে
নড়ে ওঠে লতানো পাতার প্রাণ
অস্বীকার করে ইহকালীন সম্পর্কগুলো!
শ্মশানে যেও না মানুষ
কবরের খবর না পড়ে
মানুষের কাছে যাও
খুলে যাবে মুক্তির পথ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)