মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৩

কবি শেখর দেব এর সাক্ষাৎকার



চিন্তা ও চেতনার কাছে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারলে কবিতা বৃষ্টির মতো ঝড়তে থাকে: শেখর দেবের সাথে অনলাইন আলাপ ও তার কবিতা



দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

শেখর দেব: কবিতা লেখার তাগিদ কাজ করে ভেতরে তাই লিখি


দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

শে: প্রস্তুতি নিয়ে কবিতা লেখা যায় নাকবিতা এমনি আসার ব্যাপার কিন্তু মাঝে মাঝে কবিতা কাঁচা ফর্মে আসে যাকে পাকা করে নিতে হয়তবে চিন্তা ও চেতনার কাছে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারলে কবিতা বৃষ্টির মতো ঝড়তে থাকে কবির কলমে


দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

শে: অনেকের কবিতা ভালো লাগেএকজন কবির সব কবিতা ভালো হয় না এবং লাগেও নাথাই নাম বলা শক্ত ব্যাপারতবে ভালো কবিতা লেখা হচ্ছে প্রচুর


দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

শে: সব ভালো কবিরও খারাপ কবিতা থাকেভালো কবি সব সময় ভালো কবিতা লিখবে কথা নেইতবে যারা ভালো কবিতা লিখেন তারা একটি ফর্মে ফেলে দেয় কবিতাকেস্বর সৃষ্টি হয়  খারাপ কবিতা সনাক্ত করার কোন স্কেল নেইতবে যে কবিতা মনকে নাড়া দিতে পারে না এবং সুন্দর বোধ দৃশ্যমান না হলে কবিতা খারাপ হয়নাম ধরে বাছাই করা মুশকিল


দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেনএ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শে: দশকে দশকে নতুন কবি ও কবিতা হাজির হয় আমাদের সাহিত্যেপ্রশ্নটা পরিষ্কার নাদশক কিভাবে মূল্যায়ন করি নাকি দশকের কবিতা কিভাবে মূল্যায়ন করি? দশকের কথা বললে দশক দিয়ে কবিতা আলাদা করা যায় না বা ঠিক নয়কবিকে দশকে বন্দি না করলে ভালোনব্বই দশকের কবিতা নিয়ে বলতে গেলে-এই সময়ে কবিতা অনেক Compact স্বল্প কথার কবিতা তখন পূর্ণতা পায়কবিতায় নতুন একটি ধারনা আসে এই দশকে - উত্তর আধুনিকতাযা চট্রগ্রাম হতে সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে পরেযা চট্রগ্রাম সবুজ হোটেলের আড্ডার ফসলশূন্য দশকের কথা আসলে বলতে হয় এ দশকে কবিরা নানান পরিক্ষা নিরীক্ষা মধ্য দিয়ে কাব্য কে একটা নুতন মাত্রা দিতে প্রয়াস চালিয়েছেনযা অব্যাহত আছে


দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

শে: কবিতা কবিতাই তা পশ্চিমবঙ্গের হউক বা বাংলাদেশের হউকতবে দু'দেশের কবিতার মধ্যে চিন্তাগত তারতম্য রয়েছেআমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের কবিতার মধ্যে বিচ্ছিনতার মাত্রা বেশিআমদের কবিতা পশ্চিমবঙ্গের কবিতার চেয়ে আমাদের কবিতার মান ভালো বলে মনে করি, এটি আমার বাক্তিগত ধারনা


দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

শে: ব্লগ সাহিত্য সম্পর্কে আমি তেমন অবগত নয়তবে তরুন সমাজ এ বিষয়ে উৎসাহী বলে মনে হয়তবে ব্লগ সাহিত্যের পাঠক তৈরিতে নতুন মাত্রা দিতে পারে


দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

শে: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় নাকারন বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পথে থাকলেও আমাদের অনেকে তেমন ডিজিটাল হয়ে উঠতে পারেনি বা সুযোগ পায়নিতবে সময়ের সাথে এ ধারনার পরিবর্তন হতে পারেএকদিন হয়ত ব্লগ গুরুত্ব পাবে বেশি লিটলম্যাগের চাইতে


দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শে: দৈনিকে সাহিত্য কিছু মানুষের কাছে জিম্মিসম্পাদকের অনুগ্রহ এখানে জরুরি, সাহিত্যের মান কদাচিৎ গুরুত্ব পায়এ সাহিত্যে দল সৃষ্টি হয় যার কেন্দ্রে থাকে সম্পাদক



শেখর দেব এর কবিতা

গুলজারের মোড়ে মৃত্যু বিষয়ক


নিজেকে দেখতে গিয়ে অন্ধ হয়েছি সেদিন
চারদিক আধাঁর কিলবিল
স্মৃতির আল বেয়ে আসে অতীত-আলো
ভেসে ওঠে লাল, সবুজ কতো বাহারি চরাচর

গুলজারের মোড়ে রমণীয় তিলোত্তমারা নেমে এলে
নন্দনকাননে ফোটে সুদৃশ্য ফুল
বিজ্ঞাপনি মেয়ের চোখে চোখ রেখে
পটু ইন্দ্রের দল তুলে নেয় ফুলের শিশির
খোঁজে মদির মমতা; সাইবার খুঁনসুটি 

নিজের ভেতর অন্য প্রাণের শিহরণে মৃত্যু হয়েছে আমার
রঙিন দিনগুলো ক্রমশঃ দূরে সরে গেলে
অত্মজা এক প্রাণ ছোটে পেছন পেছন

পুনর্জন্ম হলে
নিশ্চল পাথর হয়ে সুরম্য ইমারতে
সাক্ষী হব এসবের




পালশঠোঁটে বসন্ত


অলস বিকেলে কলম ছুঁড়ে পেয়েছি কাঙ্খিত পরশ
অসমাপ্ত স্কেচ্ আকাশে উড়িয়ে বেঘোর বিছানায়
নামে পাখিসুদূর প্রান্তর হতে বর্ষীয়ান দরবেশ
আনে কথার ফুলঝুরিভাবিচিত্রের বাস্তবায়নে
বাস্তবতা যায় দূরেশ্রবণাতীত শব্দের প্রতিফলনে
মাপি স্নিগ্ধ স্বপ্নের গভীরতাপ্রগাঢ় যমুনাজল ভাসায়
স্বপ্ন অতলান্তে হারায়

রক্তিম পলাশ তার পাপড়ি মেলে ওড়ায় আমাকে
পলাশঠোঁটে নরোম ছোঁয়া-পাতা ঝরায় গোপন মাতমে
মাতাল মন পলাশ পলাশ ডাকে-আসে বসন্ত


বাটালি হিলের মোলায়েম মেঘ


তোমাদের সব নির্জন রাত
                         
ভরিয়ে দেবো পূর্ণিমার আনন্দে
বিগত বর্ষার স্মৃতি নিয়ে
                   
যেতে পারো বাটলি হিল
ছুঁয়ে আসো মোলায়েম মেঘ
পাখির অভ্যর্থনায়
           
ফুলেরা খুলে দেবে পেলব পাপড়ি

প্রিয়ার চোখ দেখিনি কোনদিন
                   
ডুবে গেছি রক্তের আনন্দে
এখানে কান্ত শহর
                   
তার ঘানি টেনে টেনে
অবসাদের রাতে তোমাকে দেবো
                   
বাটালি হিলের নিরবতা